লক্ষ্মীপুরের উত্তর জয়পুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম। থাইল্যান্ড থেকে আনা ‘থাই গোল্ড’ জাতের পানি কচু চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। চলতি বছরের কচু চাষ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এই সফল কৃষি উদ্যোক্তার।
প্রথমে প্রবাসী বন্ধুর মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে ২৮০ টি থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা গাছ এনেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। চারাগুলো বড়ির পাশের ৫ শতাংশ জমিতে লাগানো হয়। বছর না ঘুরতেই সেই চারা থেকে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার কচুর ফলন হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম জানান, এ জাতের প্রতিটি কচুর উচ্চতা ১২ ফুট পর্যন্ত এবং কাঠের ওজন ( ডাল ছাড়া মূল কচু) ৪০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি লতির দৈর্ঘ ৪ ফুট ও বেড় ১২ মিলি মিটার হয়ে থাকে। বর্তমানে তার চাষকৃত একটি কচুর ওজন ৪ মাসে ২০ থেকে ২৫ কেজি ও উচ্চতা প্রায় ৮ ফুট পর্যন্ত হয়েছে এবং ৮ থেকে ১০ পিস লতির ওজন ১ কেজি হয়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী চার মাসের মধ্যে তার চাষ করা প্রতিটি কচু ৪০ কেজি ওজন হবে।
সিরাজুল ইসরামের কচু চাষের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ কচু ক্ষেত দেখতে ছুটে আসছেন। তিনি জানান ইতিমধ্যে ১০ জন চাষীকে এ কচুর চাষ করার জন্য চারা দিয়েছেন। তার কচু ক্ষেতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ঢুকে হাত উঁচু কররেও বাহির থেকে দেখা সম্ভব হয়না।
লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর জয়পুর দৌলত বাড়ির স্কুল শিক্ষক মরহুম আজহারুল ইসলাম মাষ্টারের তৃতীয় পুত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর চাকরি ছেড়ে এলাকায় ফিরে শখের বসে নার্সারী দিয়ে বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ, ফুল ও সবজির চারা উৎপাদন শুরু করেন। পশাপাশি তিনি এলাকার যুবকদের হাতে কলমে চারা উৎপাদন করা শিখাতে থাকেন। তার কাছে চারা উৎপাদন শিখে ইতিমধ্যে ৫০ জন বেকার যুবককে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তিনি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে লাউ, কলা, লেবু চাষ করে যাচ্ছেন। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী সিরাজুল ইসলাম ইউটিউবে থাইগোল্ড জাতের কচুর চাষ দেখেন। পরে তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে এ কচুর চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারে তার উৎপাদিত কচুর লতি নিয়ে গেলে মানুষ এক নজর তার উৎপাদিত কচুর লতি দেখার জন্য ভীড় জমিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি তার ক্ষেতে উৎপাদিত কচু বিক্রি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ২০টি কচু চার হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি জানান সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর কচু চাষ থেকে তার ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকার আরেক সবজি চাষী মো. শরীফ বলেন, সিরাজুল ইসলাম থেকে তিনি ইতি মধ্যে থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা নিয়ে লাগিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা। তার কাছে কৃষি চাষাবাদ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।
উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জাহান বলেন, সিরাজুল ইসলামের কচুর ক্ষেত আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। এ কচুর চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবো।