লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় বাণিজ্যিকভাবে সুপারি বাগানে আদা চাষ করে সফল নারী উদ্যোক্তা ময়না বেগম। অভিনব পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ময়না বলছেন, এ পদ্ধতিতে সুপারির বাগানে আদা চাষে অন্য নারীদেরকেও উদ্বুদ্ধ করতে চাই।
এই নারী কৃষি উদ্যোক্তাকে দেখে অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ বলছেন, আদা একটি লাভজনক চাষাবাদ। সঠিক পরিকল্পনায় চাষ করলে ২ থেকে ৩ গুণ লাভ হতে পারে। পাশাপাশি পরিত্যক্ত জমি অথবা যে জমিতে অন্য ফসল হয় না, সেই জমিতেও আদা চাষ করা সম্ভব। বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা চাষ কৃষকের কাছে একটি নতুন ধারণা। এভাবে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি বিভাগ। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ যেমন পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারবে, একইভাবে বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হবেন।
কৃষি উদ্যোক্তা ময়না বেগম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারী এলাকার আজম আলীর স্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আনসার ভিডিপি’র একটি মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করি। সেখানে একদিন কৃষি অফিসার প্রশিক্ষণ দেন সুপারি বাগানে বস্তায় আদা চাষ করা যায়। আমার বাগানে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে, এগুলো অব্যবহৃতই থাকে। এই ফাঁকা জায়গা ব্যবহারের চিন্তা থেকে বাড়ির পাশে সুপারি বাগানে ফসল ফলানোর বিষয়টি মাথায় আসে। তখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেই। এক পর্যায়ে সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে ৩০ শতক জমিতে বস্তায় আদা চাষ শুরু করি। এতে আমার পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
চাষের পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে ময়না বেগম আরও বলেন, আদা চাষে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার এবং দানাদার কীটনাশক বেলে দো-আঁশ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে বস্তায় ভরা হয়েছে। প্রত্যক বস্তায় তিনটি করে আদার গাছ আছে। সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে সারিবদ্ধভাবে রেখেছেন এক হাজার আট শত বস্তা। সাধারণভাবে আদা চাষের চেয়ে এই পদ্ধতিতে ফলন বেশি হবে। আমি আশা করছি এই পদ্ধতিতে লাভবান হতে পারব। আমি প্রথম এই পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করেছি। এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকের সুপারি বাগান আছে। আমি সফল হলে অন্যান্য নারীদেরকে উদ্বুদ্ধ করব।
খরচের বিষয়ে তিনি জানান, ৩০ শতাংশ জমির সুপারির বাগানের ভিতর বস্তায় আদা চাষ করতে খরচ হয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা। ৩৫ হাজার টাকার বীজ আদা কিনেছেন এবং জৈব ও রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ইত্যেমধ্যে তিনি ৩৫ হাজার টার আদা বিক্রয় করেছেন। আশা করছেন ভালো লাভ পাবেন। এখনও তিনি তিন লাখ টাকার আদা বিক্রয় করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
ময়না বেগমের ছেলে শ্রেষ্ঠ বলেন, আমার মা আদা এবং চুইঝাল চাষ করে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালান, আমরা দুই ভাই ঢাকায় পড়াশোনা করি। সব খরচ মায়ের কৃষি থেকে আসে।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, উপজেলার অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করছে। আশা রাখছি সুপারি বাগানে বস্তায় আদা চাষীগণ শতভাগ সফল ও লাভবান হবেন। কৃষি অফিস থেকে তাদের সকল প্রকার সহায়তা করা হবে।