চার বছর আগে মুভিং বাংলাদেশ সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেন নুহাশ হুমায়ূন। প্রথম দিকে প্রযোজক সংকট থাকলেও পরে বেশ কিছু বিদেশি উৎসব থেকে তহবিল পায় সিনেমাটি। শুধু তা-ই নয়, সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ খবর, মুভিং বাংলাদেশ-এর জন্য বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে দেশের প্রথমসারির একটি গণমাধ্যমে এসেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে ২০২২ সালে চিত্রনাট্য পড়ে সিনেমাটির জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছিল। আগে তারা আগ্রহী হলেও এখন সেই বরাদ্দ সিনেমাটি আর পাচ্ছে না। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গত ১৮ নভেম্বর সেই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের ডিপিপিতে (ডিজিটাল প্রোডাকশন পার্টনারশিপ) মুভিং বাংলাদেশ নামে সিনেমার জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এই মুহূর্তে প্রকল্প থেকে এই সিনেমাটি নির্মাণের ইচ্ছা নাই। আর সিনেমা বানানো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজও না। তাই আপাতত সিনেমায় বিনিয়োগের পদক্ষেপ থেকে সরে আসা হয়েছে।’
তাইওয়ানের তাইপে ফিল্ম কমিশনের ৮৯ হাজার ৮০০ ডলারের তহবিল পেয়ে প্রথম আলোচনায় আসে মুভিং বাংলাদেশ। বাংলাদেশি অর্থে বর্তমানে যা ১ কোটি ৭ লাখ টাকার বেশি। সিনক্রাফ্ট ফিল্ম ফান্ড থেকে পেয়েছিল ২৫ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয়, সিনেমাটি টোকিও গ্রান্ট ফাইনান্সিং মার্কেট, কান উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্ম বাজার, লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসব ও ভারতের ফিল্ম বাজার থেকে নানা সহযোগিতা পেয়েছে।
‘মুভিং বাংলাদেশ’ সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গুপীবাঘা সূত্রে আরও জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকেও অনেকেই লগ্নি করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত হয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। প্রযোজকদের মধ্যে আরিফুর রহমান জানান, ‘মুভিং বাংলাদেশ আমাদের দেশকে ব্র্যান্ডিং করার মতো সিনেমা। যে কারণে তখন চেয়েছিলাম তারা থাকুক।’
আরিফ আরও জানান, এটা কোনো রাজনৈতিক গল্প নয়। দেশের তরুণদের কথা বলবে সিনেমাটি। এটি সব সময়ের জন্যই প্রাসঙ্গিক একটি গল্প। আগামী বছর শুটিংয়ে যেতে চান তারা। পরে এই প্রযোজক বলেন, ‘‘একটা সিনেমা নিয়ে আমাদের তিন থেকে পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। দীর্ঘ এই সময়ে প্রযোজকের কাজ ফান্ড রাইজ করা। অনেক সময় লাগার কারণে অনেক লগ্নিকারী আসছে-যাচ্ছে। আমরাও অনেক সময় লগ্নিকারী ফেরত দিই। দেরি হওয়ায় অনেকে অপেক্ষা করতে চায় না, ফেরত যায়। এখন ‘মুভিং বাংলাদেশ’ বানানোর জন্য যে ধরনের অর্থ দরকার, সেখানে ৫০ লাখ টাকা খুবই ছোট অ্যামাউন্ট। এটি সিনেমা নির্মাণে বাধা হবে না।’’
আরিফুর রহমান আরও জানান, সিনেমাটি ইতিমধ্যে বড় তহবিল পেয়েছে। দেশের আরও লগ্নিকারী যুক্ত রয়েছেন। এখনো অনেক প্রযোজক সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হতে চান। দেশ-বিদেশের প্রযোজকেরা সিনেমাটির সঙ্গে এখনো যুক্ত হতে চান। কারণ, আমাদের সিনেমাটি দর্শক গ্রহণ করবে। এই প্রজেক্ট থেকে আমরা নিশ্চিন্তে টাকা তুলে আনতে পারব। বরং যারা সিনেমাটি থেকে সরে যাবে, তারাই লস করবে। এই সিনেমার ভ্যালু বুঝতে হবে। বুঝতে হবে এর সঙ্গে কারা জড়িত। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী। সেখানে কে চলে গেল, সেটা নিয়ে ভাবনার কিছু নাই।’
নুহাশ হুমায়ূন জানালেন, সিনেমার বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখছেন প্রযোজক। তিনি সিনেমাটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা-সংশ্লিষ্ট কাজগুলো নিয়েই ভাবছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, গল্প ঠিকঠাক থাকলে চিন্তা নাই। আমার সব কাজেই আমি গল্প ও চিত্রনাট্যে বেশি সময় দিই। আমি তো শর্টফিল্ম, ওয়েবের কাজ করেছি কিন্তু এবারই প্রথম ফিচার ফিল্ম করছি। মুভিং বাংলাদেশ সিনেমার জন্য দেশের বাইরে থেকে অনেক ফান্ডই আমরা পেয়েছি। কাজও এগিয়ে নিচ্ছি।’
কবে থেকে সিনেমাটির শুটিং করতে চান জানতে চাইলে নুহাশ বলেন, ‘চিত্রনাট্য শতভাগ ঠিক না হলে কোনো কাজেরই শুটিং করতে চাই না। সবার আগে আমি নিজেই চিত্রনাট্য নিয়ে খুশি থাকতে চাই। আমার জায়গা থেকে কাজ শেষ পর্যায়ে। আমার সিনেমার প্রযোজকেরা আমাকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছেন।’