একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন। গত তিন বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন এই শিল্পী। আজ (১২ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে পাপিয়া সারোয়ার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শেষ বিদায়ে প্রিয় সহকর্মীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্মরণ করেছেন দেশের কিংবদন্তি রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
তিনি লিখেছেন, ‘একসঙ্গে গানের জীবনে পথ চলেছিলাম সাদি, পাপিয়া আর মিতার সঙ্গে। শুধু আমি রয়ে গেলাম।’
তার এই সংক্ষিপ্ত মন্তব্যের মধ্যেই রয়ে গেলো কতো না বলা কথা। একইসঙ্গে নিজেদের বন্ধুত্ব ও সেই বন্ধুদের একে একে না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার যন্ত্রণার কথা ব্যক্ত করেছেন বন্যা। তিনি যে এখন একেবারে সঙ্গীহারা, একা হয়ে পড়লেন এ কথাও জানাতে ভুললেন না।
মিতা চৌধুরী ও সাদি মহম্মদের বিদায় বেলায়ও একইভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন বন্যা। সাদির শ্রদ্ধা বাসরে গেয়েছিলেন গান।
বন্যা ছাড়াও বার্তা২৪.কমকে পাপিয়া সারোয়ারের চলে যাওয়া নিয়ে মন্তব্য করেছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা। তিনি বলেন, ‘পাপিয়া সারোয়ারের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি এ দেশের অসংখ্য মানুষের প্রিয় শিল্পী। আমারও প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পীদের একজন। তার গায়কী আমার খুব পছন্দ ছিলো। তার কণ্ঠশৈলী সবার চেয়ে আলাদা, ইউনিক। এজন্য তাকে দর্শক শ্রোতা সহজেই আলাদা করতে পারতেন। সঙ্গীত নিয়ে আজীবন নিমগ্ন থেকেছেন, নতুন প্রজন্মের মাঝে নিজের মেধা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই যে সঙ্গীতগুরুর ভূমিকা, এটা ভীষণ বড় ব্যাপার। যা আমাদের সঙ্গীতের ধারাকে সচল রাখতে সাহায্য করেছে।’
রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘তার এই চলে যাওয়া, দীর্ঘদিন কঠিন ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করা, সবটাই তার গানের শ্রোতা হিসেবে, সহকর্মী হিসেবে আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক। আমি দোয়া করি এবং সবার কাছে তার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া চাই।’
সবশেষে বলেন, ‘পাপিয়া সারোয়ার চলে যাওয়ায় একটা কথা আবার মনে আসছে। আমাদের দেশের সঙ্গীতাঙ্গন কিভাবে একে একে সব অভিভাবকদের হারাচ্ছে। যে চলে যাচ্ছেন, তার শূণ্যতা রয়েই যাচ্ছে, পূরণ আর হচ্ছে না। এটা কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু নয়। অভিভাবকহীন সংসার যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে, সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই।’
দীর্ঘদিন ধরেই জটিল রোগে ভুগছিলেন পাপিয়া সারোয়ার। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বছর তাকে দিল্লিতেও নিয়ে যাওয়া হয়। তার দুই মেয়ে জারা সারোয়ার ও জিশা সারোয়ার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাস করছে।
পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম বরিশালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। পরে ১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারত যান।
তার আগে তিনি ১৯৬৬ সালে ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সানজীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিমের কাছে এবং পরবর্তীতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সংগীতদীক্ষা নেন। দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছেন। আধুনিক গানেও তিনি সফল। ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দেয়।
পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভের পর ২০২১ সালে একুশে পদক পান এই সংগীত শিল্পী।