চলমান শৈতপ্রবাহে গ্রামাঞ্চলে মাটির ঘরে থাকা লোকজন অনেকটাই আরামে আছেন। একটা সময় ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরের প্রচলন থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে গ্রামীণ পরিবেশেও কংক্রিটের ভিড়ে মাটির ঘরের সংখ্যা কমলেও নজর কাড়ছে।
মাটির ঘর গ্রীষ্মকালে যেমন শীতল থাকে তেমনি প্রকৃতিতে শীতের আমেজের সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দেয়। রংপুরের গ্রামাঞ্চলে ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনো মাটির ঘরকে ধরে রেখেছে অনেক পরিবার।
উত্তরাঞ্চলের মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, শ্যামপুর, কাউনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে নজর কাড়ছে ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। টিনের ছাউনি চালা চারিদিকে বাঁশের খুটিতে এঁটেল ও দোআঁশ (লাল) মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় এই ঘর। খুব নিখুঁত হাতে নকশা ও প্রলেপ দিতে দৃষ্টিনন্দন করে ফুটিয়ে তোলা হয় ঘরগুলোকে।
সরেজমিনে ঘুরে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোলাপপুর ভোটমারী এলাকায় সারি সারি নজর কাড়ছে মাটির ঘর। জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা মনবার আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, জন্মের পর হাতে হামরা মাটির ঘরোত থাকি। বাপ- দাদার আম্বল থাকি হারা মাটির ঘরোত। শীতের সমে ঘর গরম থাকে গরমের দিনোত খুব ঠান্ডা আরাম নাগে।
এক প্রশ্নের জবাবে তনি বলেন, একেকটা করি ঘর তুলতে এক-দুই মাসের মত সময় নাগে। হামার দোলার এঁটেল মাটি দিয়া ঘর তোলা হয়। মিস্ত্রি নাগায়া খরচ করি ঘর বানাইলে দ্যাকতে আরও বেশি সুন্দর হয়। এল্যা মাটির ঘর বানাইতে মেলা খরচ নাগে। বেশি ঝড়ি আইসলে জাগাত জাগাত একনা করি ভাঙে। হামার মাটির ঘরোত খুব শান্তি।
একই এলাকার বাসিন্দা তসলিমা বেগম বলেন, মাটির ঘরের মত শান্তি নাই। সারাদিন মাঠোত হারা খাটি খুটিয়া আরামে ঘরোত থাকোং। আগোত বয়স কম আছিল একালকায় ছইল পোইল নিয়া মাটি তুলি সবাই মিলি জোগাল দিয়া ঘর তুলছি এলা আর পাওনা। ৩ টা ঘর সামনোত একনা বারান্দা দিবার জইনতে খরচ নাগে ২৫ -৩০ হাজার। তাও টেকসই মেলা, ৩-৬ মাস পর পর একনা করি নেপ দ্যাও দেখতে ভাল দেখায়৷ স্বামীর হাতের স্মৃতি এই মাটির ঘরোত থাকি বিদায় নিয়া শেষ মাটির ঘরোত যাবার চাও।
জানা যায়, একটি মাটির ঘর তৈরিতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। কেউ কেউ আবার ঘরটি দ্বিতল করে। নিচে বসবাস, দ্বিতলে ফসল ও অন্যান্য মালামাল রাখে। মাটির ঘর শীত- গরম সব সময়ই আরামদায়ক।
বদরগঞ্জের শ্যামপুরের শিক্ষক সামসুজ্জামান জানান, মাটির ঘরের কিছু অসুবিধা আছে। অতিবৃষ্টির ফলে কখনো কখনো মাটির ঘরের কিছু অংশ ধসে পড়ে। তার পরও বাপদাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনরায় মেরামত করে বসবাস করতে হয়।