বিশ্বের জন্য মার্কিন নির্বাচন কতটা গুরুত্বপূর্ণ

আমেরিকা, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-11-05 13:12:28

বিশ্বরাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে কার হাতে উঠছে হোয়াইট হাউসের চাবি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র কি তার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাচ্ছে, নাকি দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর উত্তর মিলবে আগামীকাল ৫ নভেম্বর।

বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশটির প্রেসিডেন্ট যে-ই হোন না কেন, এই নির্বাচন গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রায় সব বিষয়েই ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিশ্বে অন্যসব দেশের চেয়ে চীনকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু বলে থাকে আমেরিকানরা। ভোটারদের এই নেতিবাচক মনোভাব হয়েছে সম্ভবত করোনা মহামারি থেকে। শত্রু দেশের তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে আছে রাশিয়া এবং তিন নম্বরে আছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তায় সম্ভাব্য হুমকিগুলো কী হতে পারে সে বিষয়টি সামনে এলে, আমেরিকান ভোটাররা রাষ্ট্রীয়ভাবে চীন কিংবা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন হয় না। তারা বরং বেশি উদ্বিগ্ন হয় দুবৃত্ত রাষ্ট্র, পারমাণবিক অস্ত্র এবং কম্পিউটার হ্যাকিং নিয়ে।

প্রকৃতপক্ষে, চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি ভোটারদের মনে উদ্বেগের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলে উঠে এসেছে।

ভোটারদের মনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে জরিপটি চালানো হয়েছিল। এতেই দেখা গেছে, সাইবারসন্ত্রাস, উত্তর কোরিয়ার হুমকি, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের সম্ভাবনা এবং সন্ত্রাসের পরে স্থান পেয়েছে চীন নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি।

চলমান বিশ্বরাজনীতির ইতিবৃত্ত শুধু সমরাস্ত্র, কূটনীতিক সমন্বিত চুক্তি, পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এসব কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন বেশ প্রভাব ফেলে আঞ্চলিক রাজনীতির পাশাপাশি বিশ্বরাজনীতির কাঠামো ব্যবস্থাপনায়ও।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস কি বাইডেনের দেখানো পথ অনুসরণ করে তার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবেন? নাকি ‘বিশ্ববাদ নয়, আমেরিকাবাদ’ বিশ্বাস নিয়ে আবারও ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বলবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের মূল্য কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আঞ্চলিক শক্তিগুলো নিজস্ব পথে চলছে, স্বৈরতান্ত্রিক শাসকরা তাদের নিজ নিজ মিত্র তৈরি করে নিচ্ছে। গাজা, ইউক্রেনসহ বিশ্বজুড়ে অন্যান্য স্থানে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ ওয়াশিংটনের ভূমিকার গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি এবং অনেক জোটে দেশটির প্রধান ভূমিকার কারণে তারা এখনও বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েলি সমাজ, সরকার তো বটেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠন ও দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করছে। কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনা চালানোর জন্য বেশি চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। তবে তিনি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করবেন, এমন সম্ভাবনা নেই।

অন্যদিকে ট্রাম্প সম্ভবত ইসরায়েলিদের গাজায় ইহুদি বসতি স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হবেন না। তিনি বরং ইরান বিষয়ে অনেক বেশি কঠোর কথা বলেন। যার ফলে অনেক ইসরায়েলি ট্রাম্পের ওপর সন্তুষ্ট। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত আচরণের কারণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হয়তো কমলার প্রশাসন থেকে আরও সুবিধা নেওয়ার কৌশল ভাবছেন।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ইউক্রেনীয় উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প রাশিয়াকে পছন্দ করে। ফলে হয়ত ইউক্রেনকে দ্রুত শান্তিচুক্তির জন্য চাপ দিতে পারেন। তবে তারা উদ্বিগ্ন যে কমলার নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনকে সমর্থন কমিয়ে দিতে পারে।

এদিকে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশ্বাস, যে-ই ক্ষমতায় বসুক, ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন শেষ পর্যন্ত কমে যাবে। অবশ্য প্রকাশ্যে কমলাকে সমর্থন দিচ্ছেন পুতিন।

এবারের মার্কিন নির্বাচন ইউরোপের জন্য যেন একটি যুগের অবসান। ইউরোপে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বললে দেখা যায়, ট্রাম্পের জয় অনেকের কাছে এক দুঃস্বপ্ন, আবার অনেকের কাছে এক আশীর্বাদ। ইউরোপের ক্রমবর্ধমান ন্যাশনালিস্ট দলগুলো- যেমন: হাঙ্গেরি, ইতালি, জার্মানি ট্রাম্পকে তাদের আন্দোলনের নেতা হিসেবে দেখে। যদি ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন, তবে তিনি অভিবাসন এবং জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্নে তাদের কট্টর অবস্থানকে স্বাভাবিক ও শক্তিশালী করতে পারেন।

তবে বেশিরভাগ পশ্চিম ইউরোপীয় নেতা উদ্বিগ্ন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা প্রতিটি পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথাবার্তা ইউরোপের অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় হতে পারে। এছাড়া ট্রাম্প ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টিও বারবার উল্লেখ করেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো ছাড়বে না। তবুও ট্রাম্প বলতে পারেন, তিনি ইউরোপীয় দেশের জন্য যুদ্ধ করবেন না। এতে জোটের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিস যেই হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হন তার উপরই নির্ভর করছে আগামী চার বছরের বৈশ্বিক ভূরাজনীতির ময়দানের মারপ্যাঁচ।আঞ্চলিক রাজনীতির পাশাপাশি বিশ্বরাজনীতির মোড় কোন দিকে ঘুরে যায় সেই সব কৌশলগত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ক্ষমতা প্রদর্শনীর বেষ্টনীর দেখা মিলবে আগামী চার বছরে। তবে বিশ্ববাসী ইতিবাচক ও সুশৃঙ্খল বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার স্বাগত জানাচ্ছে। যার শান্তির মশাল জ্বলবে সমগ্র বিশ্বে।

Related News