যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিরতি দিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি শপথ নিবেন তিনি। এরইমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনকে ঠিকঠাক মতো সাজাতে কাজ শুরু হরেছে দলটি। ট্রাম্পের সহযাত্রী হিসেবে কে কে থাকবেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
এদিকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের চিফ অফ স্টাফ হিসেবে সুসি ওয়াইলসকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের অধীনে কাজ করা অনেকেই জায়গা পাবেন না এবারের প্রশাসনে। তবে মুষ্টিমেয় অনুগতদের প্রশাসনে প্রত্যাবর্তন হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভা, হোয়াইট হাউজ ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা থাকতে পারেন তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি।
রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির ভাগ্নে গত দুই বছর ধরে বেশ ভালো সময় পার করছেন।
পেশায় পরিবেশবাদী আইনজীবী কেনেডি জুনিয়র ডেমোক্রেটিক পার্টির রাষ্ট্রপতির প্রার্থীর মনোনয়নের দৌঁড়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন। তার পরিবারের বেশিরভাগই সদস্য তার ভ্যাকসিন-বিরোধী মতামত এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে নানা বিতর্কের মধ্যে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান।
২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দুই মাসে তিনি "মেক আমেরিকা হেলদি এগেইন" নামে একটি ট্রাম্প প্রচারাভিযানের উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কেনেডি জুনিয়র রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এবং ফুড অ্যান্ড ড্রাগ সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর মতো জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন।
রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সম্প্রতি জোর দিয়েছিলেন যে তিনি কোমল পানীয় থেকে ফ্লোরাইড অপসারণের জন্য চাপ দেবেন কারণ। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এটি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।
সুসি উইলস
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর হোয়াইট হাউজের চিফ অফ স্টাফ হিসেবে সুসি ওয়াইলসকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। এটিই এবারে ৪৭তম প্রেসিডন্টের দেয়া প্রথম নিয়োগ।
ট্রাম্পের ভাষ্য, উইলস সবসময় পর্দার পেছনে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তাকে দেশের অন্যতম ভয়ংকর ও সম্মানীয় রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
রাজনীতিতে কাজ শুরু করার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৮০ সালে রোনাল্ড রেগানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে ছিলেন। পরে তিনি হোয়াইট হাউজের ‘শিডিউলার’ হয়েছিলেন।
ইলন মাস্ক
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এই বছরের শুরুর দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। যদিও ২০২২ সালে তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্পের টুপি ঝুলিয়ে রাখার এবং সূর্যাস্তে যাওয়ার সময় এসেছে।
ট্রাম্পকে সমর্থন জানানোর পর এ প্রযুক্তি বিলিয়নেয়ার শক্ত অবস্থান ধরে রাখে। ভোটে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আমেরিকা পিএসিকে তিনি ১১৯ মিলিয়নের বেশি ডলার অনুদান দিয়েছেন।
মাস্ক, টেসলা এবং স্পেসএক্সের প্রধান এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এর মালিক। তিনি একটি ভোটার রেজিস্ট্রেশন ড্রাইভও চালু করেছিলেন, যার মধ্যে সুইং-স্টেটগুলোর ভোটারদের প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন।
মাইক পম্পেও
কানসাসের সাবেক কংগ্রেসম্যান ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময় সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এর পরিচালক এবং তৎকালীন সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তাকে বৈদেশিক নীতির বাজপাখি বলা হয়। তিনি ইসরায়েলের উগ্র সমর্থক। তিনি ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দৃশ্যমান ভূমিকা পালন করেছিলেন। আব্রাহাম অ্যাকর্ডস বাস্তবায়নের মূল কুশিলবদের মধ্যে একজন। যা ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল।
রিচার্ড গ্রেনেল
রিচার্ড গ্রেনেল জার্মানিতে ট্রাম্পের রাষ্ট্রদূত, বলকানে বিশেষ দূত এবং তার জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
নেভাদার সুইং স্টেটে ২০২০ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকানের পরাজয়ের ফলাফল উল্টে দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।
আনুগত্যের কারণে ট্রাম্প তাকে পুরস্কৃত করেছেন। তাকে "আমার দূত" হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি কার্যভার গ্রহণের "২৪ ঘণ্টার মধ্যে" ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। গ্রেনেল সেই লক্ষ্যের উপায় হিসাবে পূর্ব ইউক্রেনে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল স্থাপনের পক্ষে কথা বলেছেন। এ ধারণাকে কিয়েভ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য হিসাবে উল্লেখ করেছে।
ক্যারোলিন লেভিট
ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রচারণায় জাতীয় প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন ক্যারোলিন লেভিট। এর আগে হোয়াইট হাউস প্রেস অফিসে সহকারী প্রেস সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
২৭ বছর বয়সী এই তরুণী ২০২২ সালে কংগ্রেসে সর্বকনিষ্ঠ নারী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন। তবে তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি।
ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি হতে যাচ্ছেন।
টম হোমান
টম হোম্যান ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের সময় ইউএস ইমিগ্রেশনস অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে অভিবাসী শিশুদের তাদের পিতামাতার কাছ থেকে আলাদা করার প্রবক্তা হিসেবে ধরা হয় তাকে। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির মাঝামাঝি সময়ে তিনি তার আইসিইর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।