নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়া এক মিলিয়ন ব্যারেলের বেশি তেল উত্তর কোরিয়াকে সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেন সোর্স সেন্টার। গোষ্ঠীটি স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানায়, রাশিয়া এই বছরের মার্চ থেকে উত্তর কোরিয়াকে এক মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি তেল সরবরাহ করেছে বলে অনুমান করা হয়েছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ও বিশেষজ্ঞ ডেভিড ল্যামি বিবিসিকে জানায়, পিয়ংইয়ং ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে সহায়তার জন্য যে অস্ত্র ও সৈন্য পাঠিয়েছে তার বিনিময়ে রাশিয়া এই তেল পাঠিয়েছে।
অথচ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকাতে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামাতে দেশটির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উত্তর কোরিয়ায় এভাবে তেল পাঠানো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন বলেও জানান তিনি।
স্যাটেলাইট চিত্রগুলো পর্যালোচনা করে বিবিসি জানায়, গত আট মাসে ৪৩ বার রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের একটি তেল টার্মিনালে এক ডজনেরও বেশি উত্তর কোরিয়ার তেল ট্যাঙ্কার পৌঁছেছে। ট্যাঙ্কারগুলো খালি আসছে এবং প্রায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
তবে এমন বিষয় জানতে বিবিসি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো মন্তব্যের জন্য তারা সাড়া দেয়নি।
উল্লেখ্য, বিশ্বের একমাত্র দেশ উত্তর কোরিয়ার খোলা বাজারে তেল কেনার অনুমতি নেই। জাতিসংঘ দেশটির জন্য বছরে ৫ লাখ ব্যারেল তেল পাওয়ার নিয়ম করে দিয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম।
বিবিসি আরও জানায়, ওপেন সোর্স সেন্টারের গবেষণায় উঠে এসেছে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে প্রথম তেল সরবরাহ করে চলতি বছরের ৭ মার্চ। এর ৭ মাস পরেই পিয়ংইয়ং মস্কোতে অস্ত্র ও সৈন্য পাঠায়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা জো বায়ারন বিবিসিকে বলেন, "যখন কিম জং উন ভ্লাদিমির পুতিনকে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তখন রাশিয়াও নীরবে উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করে যাচ্ছে।"
নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্তেও রাশিয়ার এমন কাজ উত্তর কোরিয়াকে তেলের খাতে স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছে। এর আগে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন উত্তর কোরিয়া তেল খাতে এমন স্বস্তি পায়নি।
মস্কো-পিয়ংইয়ং'র মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে জানান জাতিসংঘের একটি প্যানেলের সাবেক চার সদস্য। তারা বিবিসিকে বলেছেন, তাদের মধ্যে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া এই বার্তা দেয় যে মস্কো-পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে।
ডেভিড ল্যামি বিবিসিকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, "ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, রাশিয়া তেলের বিনিময়ে সেনা ও অস্ত্রের জন্য উত্তর কোরিয়ার উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।"
রাশিয়ার এমন কর্মকাণ্ড কোরীয় উপদ্বীপ, ইউরোপ এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে বলেও জানান এই জ্যেষ্ঠ গবেষক।
২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ প্যানেলের নেতৃত্বদানকারী হিউ গ্রিফিথস বলেছেন, "এই স্থানান্তরগুলো পুতিনের যুদ্ধ মেশিনকে আরও শক্তিশালী করছে। রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র, কামান ও সৈন্যদের বিনিময়ে তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।"