সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ঐতিহাসিক কুবা মসজিদ ১০ গুণ বড় করে পুনঃনির্মাণ ও সংস্কারের ঘোষণা করেছেন।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) মদিনা সফরকালে সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান এ ঘোষণা দেন।
মসজিদে কুবা ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নির্মিত মসজিদ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে কুবা পল্লীতে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এর আগে মক্কায় তিনি কোনো মসজিদ নির্মাণ করেননি। এই মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) অংশগ্রহণ করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, নতুন প্রকল্পের অধীনে মদিনার এই মসজিদ ইতিহাসের সর্বোচ্চ সম্প্রসারণ করা হবে। এর আয়তন হবে ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
প্রকল্পের লক্ষ্য, মসজিদটিতে ৬৬ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে এমন আকারে উন্নীত করা। নতুন প্রকল্পে চারপাশে ছায়াযুক্ত উঠান থাকবে, যা বর্তমান মসজিদ ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত নয় এমন নামাজের স্থানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ভীড় দূর করা, মুসল্লিদের নিরাপত্তা বাড়ানো এবং মসজিদে প্রবেশ সহজ করার জন্য আশেপাশের রাস্তাও সংস্কার করা হবে।
কুবা মসজিদের জায়গাটি ছিল- হজরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকানোর পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি। এখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ১৪ দিন (কেউ বলেন ১০ দিন) অবস্থান করেন ও তার আতিথ্য গ্রহণ করেন।
মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত কুবা মসজিদের দূরত্ব মসজিদে নববি থেকে পাঁচ কিলোমিটার। কুবা একটি বিখ্যাত কূপের নাম। সময়ের পরিক্রমায় এ কূপকে কেন্দ্র করে যে জনবসতি গড়ে উঠেছে, তাকেও কুবা বলা হতো। এরই সূত্রে মসজিদের নাম হয়ে যায় মসজিদে কুবা।
মসজিদে কুবা শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করা হয়। নবীর আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) তার খেলাফতকালে মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদের পুনর্নিমাণ ও সংস্কার করা হয়। উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তার ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসকরা মসজিদে কুবার সংস্কারকাজ করেন।
৪৩৫ হিজরিতে আবু ইয়ালি আল-হোসাায়নি কুবা মসজিদ সংস্কার করেন। তিনি মসজিদের মিহরাব তৈরি করেন। ৫৫৫ হিজরিতে কামাল আল-দিন আল-ইসফাহানি মসজিদে আরও বেশ কিছু সংবর্ধনের করেন। পরবর্তী সময়ে ৬৭১, ৭৩৩, ৮৪০ ও ৮৮১ হিজরিতে ওসমানি সাম্রাজ্যকালে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ওসমানি শাসনামলে ১২৪৫ হিজরিতে সর্বশেষ সংস্কার করেন সুলতান আবদুল মজিদ।
১৯৮৬ সালে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের সময় সর্বশেষ সম্প্রসারণ হয়। তখন পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদাপাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্যকোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।
মসজিদে কুবার বর্তমান আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার। চারটি উঁচু মিনার, ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোট গম্বুজ রয়েছে। এছাড়া ছাদের অন্য অংশে ৫৬টি ছোট গম্বুজের অবয়ব রয়েছে। ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে এই মসজিদে।
মূল মসজিদ ছাড়াও এখানে রয়েছে আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি। তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ এবং চার কোণায় চারটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদের চতুর্দিকের সুবজ পাম গাছের বলয় মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে।
মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। মসজিদে নারী ও পুরুষদের নামাজের জায়গা ও প্রবেশ পথ আলাদা। অজুর জায়গাও ভিন্ন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর। ঐতিহাসিক কুবা মসজিদ শ্বেতবর্ণের একটি অনন্য স্থাপত্যকর্ম হওয়ার দরুন বহু দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হয়।