নানা ধরনের পাপে জড়িত ব্যক্তিরা কখনো কখনো জীবনের একটি পর্যায়ে অনুতপ্ত হন। প্রচণ্ডভাবে নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকেন। এ অবস্থায় তারা পাপ থেকে পবিত্র হওয়ার পথ খোঁজেন। মনে মনে অনেকে ভাবেন, আমি এখন কী করব।
আমি কি বিচারকের সামনে গিয়ে কোর্টে দাঁড়িয়ে সব কিছু স্বীকার করব, আমার ওপর শাস্তির বিধান কিভাবে কার্যকর করব?
অনেকে চিন্তা করেন, আমার পাপের কথা যদি সমাজ জেনে যায়, তাহলে কিভাবে মুখ দেখাব?
অর্থাৎ অনুতপ্ত পাপীরা একদিকে পাপ থেকে পবিত্র হতে চায়, অন্যদিকে পাপ প্রকাশের মন্দ প্রতিক্রিয়া থেকে নিষ্কৃতি চায়।
এমন মানুষের জন্য ইসলামের বক্তব্য হলো, আপনার উচিত, আল্লাহর কাছে তওবা করা। নিজের অনুতাপ আল্লাহর কাছে প্রকাশ করা। তওবা হলো- একমাত্র আল্লাহর জন্য তখন স্বীকারোক্তি।
আর তা একমাত্র আল্লাহর কাছে করতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জানে না যে আল্লাহই একমাত্র তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন...।’ -সুরা তওবা : ১০৪
মূল ব্যাপার হলো, যদি পাপের বিষয়টি বিচারক বা আদালত পর্যন্ত না পৌঁছে তাহলে জরুরি নয় যে কেউ এসে স্বীকারোক্তি দেবে। যার দোষ আল্লাহ গোপন রেখেছেন সে যেন নিজের দোষ গোপন রাখে।
তার জন্য যথেষ্ট হবে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা। মহান আল্লাহ বান্দাদের দোষত্রুটি গোপন করতে ভালোবাসেন। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী এর ব্যতিক্রম। আর নিশ্চয়ই এটা বড় অন্যায় যেকোনো ব্যক্তি রাতের বেলা অপরাধ করল, যা আল্লাহ গোপন রেখেছেন। কিন্তু সে সকালে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক, আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল।’ -সহিহ বোখারি : ৬০৬৯
তবে এটা সত্য যে নবীযুগে কয়েকজন ব্যক্তি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এসে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন। নবী কারিম (সা.) তাদের ওপর হদ (কোরআন-হাদিসে নির্ধারিত শাস্তি) প্রয়োগ করেছেন। এটা হয়েছিল তাদের নিজেদের পবিত্র করার প্রবল ইচ্ছার কারণে। এর প্রমাণ হলো, যখন একজন নারী এসে ব্যভিচার করেছেন বলে স্বীকার করেছেন, তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) না শোনার ভান করে মুখ ফিরিয়ে নেন।
এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে কোর্টে গিয়ে লিপিবদ্ধ করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেওয়ার প্রয়োজন নেই, যখন আল্লাহ তার বান্দার দোষত্রুটি গোপন রেখেছেন। তেমনি মসজিদের ইমামের কাছে গিয়ে ইসলামি হদ কায়েম করার জন্য নিবেদন করাও জরুরি নয়।
তবে হ্যাঁ, নিজের পাপ যদি অন্যের হক সম্পর্কিত হয়, তাহলে অবশ্যই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে বা তার প্রাপ্য হক যেকোনো উপায়ে পরিশোধ করে দিতে হবে।
তবে ব্যক্তির তওবা কবুলের জন্য অবশ্যই অনুতপ্ত হতে হবে। অনুতপ্ত হয়ে সে সব ধরনের পাপ থেকে মুক্ত হতে হবে এবং অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
এ জন্যই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অনুতপ্ত হওয়াই হলো তওবা।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৬৮০২