পবিত্র হজ নানা রহস্য ও হেকমতে ভরপুর এমন এক ইবাদত, যাতে রয়েছে অনেক কল্যাণ। বিশ্বের মুসলমানরা ফরজ হজপালনের জন্য জিলহজ মাসের প্রথম দিকে পবিত্র কাবার শহর মক্কামুখি হন। আর উমরা সারা বছরের যেকোনো সময় আদায় করা যায়। সব ধরনের সামর্থ্য থাকলে একজন মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ।
হজের দর্শনের মধ্যে রয়েছে বস্তুগত, আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক এবং ব্যক্তিগত নানা কল্যাণ। যেমন- হজ মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সমস্যাগুলো পর্যালোচনার সুযোগ এনে দেয় এবং এতে জোরদার হয় মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতি। সাংস্কৃতিক লেনদেনও ঘটে হজকে কেন্দ্র করে।
হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দর্শন হলো, একনিষ্ঠ ও প্রেমময় চিত্তে আল্লাহর দাসত্বের ঘোষণা দেওয়া। ইহরাম বাঁধা, কাবা ঘরের তওয়াফ ও কোরবানিসহ অন্যান্য তৎপরতায় এ বিষয়টি ফুঁটে উঠে। এ ছাড়া হজের মাধ্যমে আরও বেশ কিছু বিষয় প্রকাশ পায়, সেগুলো হলো-
পরকালের প্রতি মনোযোগ
সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরে হজযাত্রী সব ধরনের পার্থিব মোহ ও আকর্ষণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিজেকে আধ্যাত্মিক ও আসমানি পর্যায়ে উন্নীত করেন।
মুসলমানদের সহমর্মিতা
হজের সময় সারা বিশ্বের মুসলমানরা হন একত্রিত। সমচিন্তা ও সহমর্মিতার ঢেউ খেলে যায় তাদের মধ্যে। কিভাবে বিশ্বের মজলুম ও দুর্বল মানুষদের সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে ঘটে বিশ্লেষণ ও মতবিনিময়। মুসলিম বিশ্বের যে বিশাল শক্তিমত্তা তা দেশ ও জাতিগুলোর সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে পারে।
আলেমরা বলেন, ‘হজ এমন এক বিধান, যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ধর্মের প্রতি আনুগত্য ফুটে উঠে ও পার্থিব নানা কল্যাণ অর্জন করে। হজ মৌসুমে সারা দুনিয়ার মানুষ একত্র হওয়ায় জানতে পারে একে-অপরকে এবং জাতিগুলো পরস্পরের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উৎপাদন থেকেও হয় উপকৃত। এ ছাড়া তারা নবী কারিম (সা.)-এর অবদান এবং তার সম্পর্কে নানা তথ্য ও প্রামাণ্য বিষয় জানতে পারে।’
ইসলামি সমাজের সুরক্ষা
হজ ইসলামকে শক্তিশালী করে ও শক্তিশালী করে মুসলিম উম্মাহকে। হজ নানা শাস্তি থেকে বিশ্বের মুসলমানদের রক্ষা কর। কাবা ঘরকে পরিত্যাগ করা হলে ও হজ বন্ধ হয়ে গেলে ধ্বংস হবে সমাজ এবং নাজিল হবে আল্লাহর শাস্তি। তাই মুসলিম সরকারের উচিত হজপালনে জনগণকে উৎসাহ দেওয়া এবং কোনো ব্যক্তির যদি আর্থিক সামর্থ্য নাও থাকে তাকেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে হজে পাঠানো।
হজের মাধ্যমে অভাব দূর হয়, এটা ঐক্যের মাধ্যম। হজযাত্রীরা জালেম, সত্য গোপনকারী ও মুশরিকদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। এটা হজের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তারা বিশ্বের সব মজলুম ও বঞ্চিতদের প্রতি সংহতি ঘোষণা করেন।