বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বামী হারিয়ে দিশাহারা নাজমা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2024-10-06 22:17:18

আল্লাহর ধন আল্লাহ নিয়্যা গেইচে, লাশ কাটি ছিড়ি আর কি লাভ হইবে? আইতত এ্যাটে লাশ থুইলে বিয়ান বেলায় ডোমেরা লাশটাক কাটিয়া কলিজা,ফ্যাপরা সউগে বের করবে। থোয়ার দরকার নাই হামরা গরিব মানুষ বাবা, লাশটাক কষ্ট দেওয়ার থাকি বাড়িত নিয়্যা য্যায়া দাফন করিয়্যা মাটি দেওয়্যা ভালো।

প্রতিবেশীদের এমন মন্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুর নগরীতে নিহত মকুল মিয়ার মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন সম্পন্ন করেন ভুক্তভোগী পরিবার। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে এসব বলেন নিহত মকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নিহত বাবুর্চি মকুলের পরিবার। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ৩ কন্যা সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা মকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করায় সরকারি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে মকুল মিয়ার পরিবার।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ৪ আগস্ট দুপুর ১টায় মকুল মিয়া (৫০) কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হয় কাচারি বাজার আঙ্গুর মিয়ার হোটেল অভিমুখে। পথিমধ্যে সিটি মার্কেটের সামনে গেলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার ওপরে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে প্রাণের ভয়ে মানুষ যে যার মতো পালাতে থাকলে মকুল মিয়াও জীবন বাঁচাতে দৌড় দেয়। সে সময় কাঁদানে গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।বেশ কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর পথচারীরা তাকে চিনতে পেয়ে নিয়ে যায় আঙ্গুর মিয়ার হোটেলে।

৪ আগস্ট ছিল রংপুরজুড়ে রণক্ষেত্র অবস্থা। রিকশা-ভ্যান চলছিল একেবারেই কম। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় নগরীর গুপ্ত পাড়ার ভাড়া বাড়িতে। এতে মকুল মিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ভ্যানে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই দিন সন্ধ্যায় তার লাশ দাফন করেন পরিবার।

ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করার বিষয়টি নিয়ে নিহত মকুল মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, প্রতিবেশীদের মন্তব্যে লাশটাকে কষ্ট না দিতে পোস্টমর্টেম ছাড়াই দাফন করা হয়। এখন শুনতেছি ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করার জন্য সরকারি তালিকাভুক্ত হয় নাই হামার স্বামীর নাম। আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেল। আমি এখন তিনটা বেটিক নিয়া কি করিয়া চলব। মুইতো মাইনসের বাড়িত কোন রকমে কাম করি খাওছো। ছাওয়া গুলাক পড়াইম কি দিয়া। খিলাইম কি? কেউ হামার খোঁজ নেয় না।

স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘ এক যুগ থেকে রংপুর নগরীর গুপ্তপাড়া খরমপট্টিতে হারুনের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে রংপুর সদরের ময়নাকুটি এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মকুল মিয়া (৫০)।

মকবুল হোটেলের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর থেকে আমার এখানে বাবুর্চির কাজ করেছিল মকুল। তার অবর্তমানে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। তার তিন মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মকুলের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার আহবান করছি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মানিক মিয়া বলেন, নিহত মকুল হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবারের মৃত্যু সম্পর্কে কোন দাবি না থাকায় ঘটনার দিনেই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

Related News