শারদীয় দুর্গাপূজা: উৎসবের আমেজ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে

, জাতীয়

অভিজিত রায় (কৌশিক), স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-10-07 20:18:20

অপেক্ষার পালা প্রায় শেষ। আর মাত্র দু’দিন। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা। আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া এই উৎসবকে সামনে রেখে শেষ সময়ে আমেজ লেগেছে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। শুভ মহালয়ায় দেবীর আহ্বান শেষে এখন মণ্ডপে-মণ্ডপে চলছে দেবী বরণের প্রস্তুতি চলছে। উৎসবের আমেজ লেগেছে শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সী সনাতনী মানুষের মনে।

সোমবার (০৭ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ঘুরে উৎসব মুখর পরিবেশের এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মন্দিরের ঠিক সামনেই তোরজোড়ের সাথে চলছে প্যান্ডেল ও মঞ্চ নির্মাণের কাজ। অবিরাম গতিতে বাঁশ-কাঠ দিয়ে নির্মাণ কাজ করে চলেছেন ডেকোরেশনের দায়িত্বে থাকা শ্রমিকেরা। যেন দম ফেলারও সুযোগ নেই যেন তাদের।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই বাম পাশের ভবনের নিচে ব্যবস্থা করা হয়েছে পূজা কমিটি ও অতিথিদের বসার স্থান। ঠিক তার পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোলরুম। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বিপরীত পাশেই রয়েছে দুর্গা পূজার মন্দির।

প্যান্ডেল নির্মাণ শ্রমিক হাবিব বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের এখন বিশ্রামেরও কোনো সুযোগ নেই। কালকের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। এখনও অনেক কাজ বাকি। রাত জেগে হলেও বুধবারের আগেই আমাদের কাজ শেষ করতে হবে।

মঞ্চ নির্মাণ শ্রমিক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, পূজার মধ্যে এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। তার জন্যই এখানে মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। আশা করি আজকের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে কাপড় লাগানোর কাজ আজ শেষ হবে না।


মন্দিরের প্রতিমার কাজ শেষে সামনের দিকের গ্রিলের সাথে সাদা কাপড় বেঁধে ঢেকে রাখা হয়েছে প্রতিমা। ঠিক তার সামনেই আগত ভক্ত বৃন্দদের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাঁশ বেঁধে বিভক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন অংশে।

মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই বাম পাশের ভবনের নিচে ব্যবস্থা করা হয়েছে পূজা কমিটি ও অতিথিদের বসার স্থান। ঠিক তার পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোলরুম। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বিপরীত পাশেই রয়েছে দুর্গা পূজার মন্দির।

এছাড়া মন্দির প্রাঙ্গণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপির) পক্ষ থেকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বা সিসি ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে। তাছাড়া মন্দিরের বিভিন্ন স্থানে ‘সমগ্র এলাকা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত’ লেখা সম্বলিত বিলবোর্ডও দেখা গেছে।

উৎসবের আমেজ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে

মূলত এবার সনাতনীদের পূজায় যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড রুখতে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে সকল ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দেশের সকল পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ফলে পূজায় সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরের তিনি পরিদর্শন শেষে পূজায় অপতৎপরতার চেষ্টা করা হলে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান।

আইজিপি বলেন, যদি কেউ শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটায় বা অপতৎপরতা চালায় সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


তিনি আরও বলেন, আমাদের মোবাইল টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং সাদা পোশাকের সদস্যরা সব জায়গায় থাকবে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে, আনসার বাহিনীর সাথে ভলান্টিয়াররা রয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।

আইজিপি বলেন, কোথাও কোনো ধরনের অপতৎপরতা ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ নাই। আমরা সাইবার মনিটরিং জোরদার করেছি। সাইবার পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছে যাতে কেউ ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য, গুজব ও অতিরঞ্জন কোনো কিছু না ছড়াতে পারে। আমরা চাই সকলের সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে এবং নিরাপত্তার মাঝে শারদীয় দুর্গা উৎসব পালন করব।

তিনি জানান, জেলা উপজেলা এবং সদর দফতরে আমরা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। যেখান থেকে যে কেউ দ্রুত সংবাদ জানাতে পারবেন। এনটিএমসি তাদেরও দ্রুত ব্যবস্থা রেখেছে।

এছাড়াও আগামীকাল থেকে প্রতি পূজা মণ্ডপে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা কাজ শুরু করবেন। তারা পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

চলতি বছর সারাদেশে দুর্গাপূজায় মণ্ডপের সম্ভাব্য সংখ্যা ৩২ হাজার ৬৬৬টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৫৭টি ও উত্তর সিটিতে ৮৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পূজা মণ্ডপের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে তা সরকারি বা পূজা উদযাপন পরিষদের তালিকা নয়। এটি একটি সম্ভাব্য তালিকা।

গত (১০ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার সচিবালয়ে দুর্গাপূজার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

বৈঠকে পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্গাপূজার সময় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটি হলো স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা। এবারের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ একটু আলাদা হবে। বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিককে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। যেমন ধরুন, স্বেচ্ছাসেবক (ক) রাত একটা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত, স্বেচ্ছাসেবক (খ) রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। তাদের সংখ্যা সর্বনিম্ন রাতে তিন জন এবং দিনে দুই জন হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে যানজট নিরসনেও।

এদিকে এবার পূজা মণ্ডপগুলোর জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। সম্মেলনে তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় প্রধান উপদেষ্টা চার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে অসচ্ছল মণ্ডপগুলোতে এই টাকা বিতরণ করা হবে। প্রতি পূজা মণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হতো। আমার মন্ত্রণালয় থেকে এটা ২০০ কেজি পর্যন্ত বাড়ানো সুপারিশ করেছি।

Related News