কারাগারে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে ডগ স্কয়াড মোতায়েন করা হবে: কারা মহাপরিদর্শক

, জাতীয়

আল-আমিন রাজু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা | 2024-10-08 20:21:28

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের শাসন ব্যবস্থার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে দীর্ঘ শাসনের কারণে দেশের সব স্তরেই বাসা বেঁধে ছিলো অনিয়ম ও দুর্নীতি। বিরোধী মত দমনে হাসিনা সরকারের নির্যাতেনের অন্যতম হাতিয়ার ছিলো কারাগার। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে কারাগারের পদে পদে দুর্নীতি ও অনিয়মের রাজত্ব গড়ে উঠেছিলো। ফলে টাকা দিলেই কারাগারে বসেই বন্দীরা পেয়ে যেতেন মাদক, মোবাইল ফোন। এতে শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধীরা কারাগারে বসে অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। এসব কাজে তাদের অন্যতম সহযোগী ছিলো কারারক্ষী ও কারা কর্মকর্তারা। তবে সেই চিত্রের বদল আসতে শুরু করেছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর দেশজুড়ে পট পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে কারাগারেও। যদিও কারাগারে বন্দীদের বিদ্রোহের কারণে বেশ কয়েকটি কারাগারের বন্দী পালিয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন কারারক্ষীরা। বদল এসেছে কারারক্ষী বাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন পদে।

গত ১১ আগস্ট কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। দায়িত্ব নিয়ে শুরু করেছেন নতুন দিনের কারাগার ও বন্দী ব্যবস্থাপনার কাজ। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্ত আলাপে তুলে ধরেছেন কারাগার নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা।

কারা মহাপরিদর্শকের কথা শুনেছেন বার্তা২৪.কমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আল-আমিন রাজু। পাঠকদের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

বার্তা২৪.কম: ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে কারাগারের কতটা ক্ষতি হলো। কি ভাবে এর থেকে উত্তোরণ করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

ব্রি. জে. মোতাহের: ৫ই আগস্ট কারাগারে যে ঘটনা ঘটেছে এমন ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কি ব্রিটিশ ভারত কারা ইতিহাসেও ঘটেনি। এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছিলো। কারাগারের বাইরে ছাত্র জনতার যে অভ্যুত্থানের জোয়ার কারাগারেও লেগেছে। ফলে দেশের পাঁচটি কারাগার বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১৭টি কারাগারে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যদিও ৫ তারিখের পরে দেশের দুটি কারাগারের সকল বন্দি ও অন্যান্য কারগারের অল্প কিছু বন্দি পালিয়েছে। এর বাইরে দেশের ৬৮টি কারাগার রয়েছে যার মধ্যে ৬৩টি কাগারের কোনো বন্দি পালাতে পারেনি। কিছু ক্ষতি হয়েছে। বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। তবে বন্দি পালাতে পারেনি। এক্ষেত্রে কারা কতৃপক্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তারা পরিস্থিতি সামলে উঠেছে। তারা প্রসংশা পাওয়া যোগ্য। পাশাপাশি সেনাবিহনীর প্রতি আমরা ধন্যবাদ জানাই তারা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের সহযোগিতা করেছে।

তবে ক্ষতির বিষয়টা বলতে গেলে আমাদের দুইটা কারাগার বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যেগুলো এখনো আমরা পুরোপুরি চালু করতে পারিনি। বাকিগুলো সামলে উঠতে পেরেছি। এছাড়া বন্দি ও কারারক্ষী ব্যবস্থাপনায় আমরা বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছি। বর্তমানে আমরা কোনো ঝুঁকি নেই।

বার্তা২৪.কম: বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কারণে কারাগারে বিদ্রোহের আগাম গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলেন কি না?

ব্রি. জে. মোতাহের: গত ১৭ই জুলাই নরসিংদী কারাগারে হওয়া বিশৃঙ্খলার ঘটনায় আমরা বিষ্মিত হয়েছিলাম। এমন ঘটনার জন্য কারা অধিদফতর প্রস্তুত ছিলো না। যদিও আমি পরে যোগ দিয়েছি। কিন্তু তৎকালিন দায়িত্বরত কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এটা বলছি। এরপর বেশ সতকর্ততা মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমরা সেটিকে রক্ষা করতে পারিনি। আগস্টের ৫ তারিখ আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা পাইনি। পুলিশ মাঠে ছিলো না। সেনাবাহিনীও নানা জায়গায় জরুরি দায়িত্বে ছিলো। ফলে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের মুখে এমন পরিস্থিতিতে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে ছিলো না। যার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে সতর্ক থাকার কারণে কয়েকটি কারাগার বাদে সবগুলোই সুরক্ষিত ছিলো।

বার্তা২৪.কম:৫ই আগস্ট সরকার পতনের পরে বন্দিদের মাঝে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। তারা কারা কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কারা রক্ষী হতাহতের সংখ্যা কত?

ব্রি. জে. মোতাহের: ৫ই আগস্টের কারাগারের বিশৃঙ্খলা ও বন্দিদের হামলায় কারারক্ষী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভিন্ন পদের ২৮২ জন আহত হয়েছেন। তবে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। বেশ কিছু গুরুত্বর আহতের ঘটনা ঘটেছে। সবাই সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছে। তবে বেশ কিছু কারাগারের ভেতরে কারা রক্ষী ও কর্মকর্তাদের বাসা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদেরও আমরা সহযোগিতা করবো।

বার্তা২৪.কম: কারাগারের স্লোগান হলো-রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ। এমন স্লোগানকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা কারাগারে ছোট আপরাধীরা এসে দূর্ধর্ষ অপরাধী হয়ে বের হচ্ছে। কারাগারের ভেতরের ভেতরে নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ কি না?

ব্রি. জে. মোতাহের: আসলে আমাদের কারাগারগুলোতে বন্দির তুলনায় স্থান সংকট। আমাদের নতুন কারাগারগুলোতে ছোট অপরাধী, বড় অপরাধী, সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আলাদা রাখার সকল সুবিধা থাকলেও পুরাতন কারাগারগুলোতে স্থান সংকুলানের কারণে সেই কাজটি ব্যহত হচ্ছে। যদিও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে এটা আমরা অনেক সময় করতে পারি না। আরেকটি বিষয় হলো আমরা বেশিরভাগ সময়ে অতিরিক্ত বন্দীদের রাখতে হয়। বর্তমান সময়ে কম থাকলেও বিভিন্ন সময়ে এটা অনেক বেশি হয়ে যায়। তবে এটা ঠিক আমাদের ব্যবপস্থাপনার কারণে এমন প্রভাব পড়ছে। এই সমস্যা ইতোমধ্যে আমরা চিহ্নিত করে ফেলেছি। ভয়ংকর আসামি যারা বড় অপরাধ করেছেন তাদের সঙ্গে ছোট অপরাধীদের মিক্সিং যেনো না হয় সেদিকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে আমরা রাখার চেষ্টা করছি। তবে সব স্থানে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

বার্তা২৪.কম: কারা কর্মকর্তাদের অনেকে রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় থাকার কারণে উর্ধ্বতনদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে বন্দি ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের দূর্বলতা পেয়েছেন কি না।

ব্রি. জে. মোতাহের: অতীতের বিষয়টা আমি বলতে পারবো না। তবে বর্তমানে আমি ভেতর বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করছি। মন্ত্রণালয় আমাকে সহযোগিতা করছে। আমি চাপমুক্তভাবে তাদের প্রেরণায় কাজ করছি। বন্দিদের সঙ্গে মানবিক ও নিরাপদ রাখার বিষয়গুলোতে জোর দিচ্ছি। বন্দিদের মেরিট অনুযায়ী যার যা প্রাপ্য সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার যে অভিযোগের কথা বলছেন। বর্তমানে এই বিষয়গুলো আমি পাচ্ছি না। তবে আগে মরিচা পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যে শৈতল্যতা ছিলো এবং নিয়মবর্হিভুত কাজে জড়িত থাকার যে অভিযোগ ছিলো সেগুলো তো এক দিনে পরিস্কার করা সম্ভব না। তবে আমরা ধাপে ধাপে চেষ্টা করছি। মটিভেশন দিয়ে আর কথা না শুনলে শাস্তি দেওয়া। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। পেশাগত দিক দিয়ে যারা দক্ষ, কাজে আগ্রহী, উদ্যোমীদের সঠিক পদে পদায়ন করা হচ্ছে। যেটা হয় তো অতীতে কঠিন ছিলো আইজি প্রিজনের জন্য। বর্তমানে আমি পেশাগত দক্ষতা দিয়ে বদলি করতে পারছি। আশা করছি অচিরেই এর ফল পাওয়া যাবে।

বার্তা২৪.কম: কারাগারে মাদক সরবরাহ ও বন্দিদের মাদক সেবনের ঘটনা ঘটছে। যেখানে খোদ কারারক্ষীরা জড়িত। আপনি মাদক সরবরাহ বন্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন?

ব্রি. জে. মোতাহের: আপনারা জানেন কারাগারের বন্দীদের মধ্যে বড় একটি সংখ্যা মাদক সংশ্লিষ্ট মামলার আসামি। যার মধ্যে অনেকেই মাদক সেবি আছে। তাদেরকে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে ইউএনের একটি সংস্থার সহায়তায় চিহ্নিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি বন্দীদের মাদক মুক্ত করতে তাদের কে বিভিন্নভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যাদের কে মাদক সেবি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে তাদের এই চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে। তবে মাদক প্রবেশের বিষয়টাতে আমি একমত যে আমরা এখনো মাদক প্রবেশ বন্ধ করতে পারিনি। তবে আমরা এটার বিষয়ে সজাগ। তল্লাশীর ক্ষেত্রে আমরা কড়াকড়ি আরোপ করেছি। সম্প্রতি কারারক্ষীদের তল্লাশী করে মাদক পাওয়া গেছে। তাদের কে ইতোমধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে পুলিশের দেওয়া হবে। যে কেউকে মাদক সম্পৃক্ততা বা আচারণে সন্দেহ হলেই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। অতীত অভ্যাসের কারণে এটা হয়ে আসছে। তাই আমরা কারাগারে মাদক সরবরাহ বন্দে কঠোর তল্লাশীর পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহতায় কারাগেটে ডগ স্কয়াট মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেলে বাস্তবায়ন করা হবে।

পাশাপাশি বন্দী ও রক্ষীদের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারাগারের ভেতরে কারো শরীরে যদি মাদক গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের কে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, এটা আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।

বার্তা২৪.কম: কারাগারে বন্দীদের ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহার ও কারাগারে থেকেও অপরাধ সামরাজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দীদের নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার নাম করে কারা রক্ষীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্বজনদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে টাকা আদায় করছে। বিষয়টি আপনার নজরে আছে কি না। থাকলে কি ধরনের ব্যবস্থা নেবেন?

ব্রি. জে. মোতাহের: এই বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আমরা সজাগ আছি। ইতোমধ্যে কারাগারের ভেতরে অভিযান হয়েছে যা প্রতিনিয়ত চলছে। অতীতে কেউ মোবাইল ফোন ভেতরে নিতেও পারে তারপরেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকবে না। আমরা অনেক ফোন উদ্ধার করেছি। জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। কারণ এটা আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি অস্বীকার করছি না, কারাগারে ফোন ব্যবহার আমাদের কারা রক্ষীদের সহায়তা ছাড়া সম্ভব না। যে কারণে আমরা পুরো বিষয়টাকে একটি অটোমেটিক সিস্টেমের আওতায় আনতে কাজ করছি। অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো বিষয়টি অটোমেশনে চলে আসবে। বন্দীদের টাকা পয়সা জমা ও ফোন কল করার বিষয়টিও এর আওতায় থাকবে। অর্থাৎ কারাগার ক্যাশ টাকা মুক্ত করা হবে। আমরা সমন্বিত সেবার আওতায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নির্ভর একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। এটার মাধ্যমে আমার প্রত্যাশা আর্থিক অনিয়ম বন্ধ হবে। এছাড়া কোনো কারণে যদি নজর এড়িয়ে কারাগারের ভেতরে চলে আসে সেটি উদ্ধারেও আমাদের কাজ চলছে। কারাগারে ফিকোয়েন্স সার্স চলছে, এটা চলমান থাকবে। আমরা ব্লক রেইডের মাধ্যমে আমার সব কিছু দূর করতে কাজ করছি। অতীতে অনেক অপকর্ম হয়েছে। যেটা ধিরে ধিরে উন্নতি হচ্ছে। পাশাপাশি যদি কারো মোবাইল আমরা উদ্ধার না করতে পারি তাহলে সে যেনো ব্যবহার করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বার্তা২৪.কম: কারাগারে টাকার বিনিময়ে হাসপাতালের বেডে থাকার কারণে সাধারণ কারাবন্দীরা চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি কারাগারে চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় যথাযথ চিকিৎসা সেবা মিলছে না। এমন কি অনেক গুরুত্বর রোগীও নামমাত্র সেবা পাচ্ছেন। কারা হাসপাতালের উন্নয়নে কি করবেন?

ব্রি. জে. মোতাহের: কারা হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে থাকার যে অভিযোগ রয়েছে সেটিতে আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। এখন এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। অসুস্থ ছাড়া কেউ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ নেই। চিকিৎসক ও নার্সের সংকট রয়েছে এটা স্বীকার করছি। এই কারণেই আমাদের কারা হাসাতালে চিকিৎসা সেবায় দূর্বলতা রয়েছে। আমাদের চিকিৎসকরা আসতো স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে। এখান থেকে আমরা চাহিদা মতো ডাক্তার পাচ্ছি না। এটা কাটিয়ে উঠতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কাজটি চলমান রয়েছে। যদি সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যায় তাহলে আমরা হয় তো কাটিয়ে উঠতে পারবো। তবে সরকার যোগ্য লোকজন পাচ্ছে না বলে নিয়োগ দিতে পারছে না। প্রয়োজনীয় জনবল পেলে আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো। আর ঔষধ সরবরাহ আমরা করে থাকি। তবে আমরা অতিরিক্ত বন্দীদের রাখতে হচ্ছে ফলে বড় একটি আর্থিক বিষয় রয়েছে। তবে আমরা চাহিদা মতো চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

বার্তা২৪.কম: কারাগারে বন্দীদের দক্ষতা করার উদ্যোগ ও পুরান ঢাকায় পরিত্যাক্ত কারাগারটি যাদুঘরে রুপান্তরের একটি প্রকল্প চলছিলো। এইটার অগ্রগতি কতদূর?

ব্রি. জে. মোতাহের: আসলে আমরা কারাগারটাকে বন্দীশালা না রেখে সংশোধন সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। এটা নিয়ে নানা উদ্যোগ রয়েছে। ওই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কারা বন্দীদের দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। তবে অনেক কারাগারে জায়গা সংকটের কারণে এটা চালু করা যাচ্ছে না। তবে কেরাণীগঞ্জ কারাগারে কমপিউটার ট্রেনিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা অর্জনের জন্য ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। গার্মেন্স পন্য, জুতা, বেকারীসহ নানা পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ট্রেনিং গ্রহণের পাশাপাশি তাদের আয়ের একটি সুযোগও রয়েছে। বন্দীদের তৈরি করা পণ্য বিক্রি হলে তারা আয়ের একটি অংশ পায়। আমরাও চাই বাইরের মতো বন্দীরাও প্রশিক্ষণের সুবিধা পান। আর পুরান ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় পুরাতন কারাগারকে যাদুঘর ও পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলমান রয়েছে। এখানে যাদুঘরের পাশাপাশি পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রাখা হবে। বর্তমান পেক্ষাপটে এটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। তবে আশা করছি সরকার এর কাজ শেষ করতে সহযোগিতা করবে।

বার্তা২৪.কম: আপনার ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ব্রি. জে. মোতাহের: বার্তা২৪.কমকেও ধন্যবাদ।

Related News