বন্যায় ময়মনসিংহের ৩৫৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2024-10-08 20:53:52

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে এ তিন উপজেলার ৩৫৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। এরমধ্যে প্রাথমিক ২৭৪টি ও মাধ্যমিকের ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে, মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ভোর থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হওয়ায় কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার ভোর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্তত ২৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তিন উপজেলায় নগদ সাত লাখ টাকা ও ৬৩ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। বৃষ্টি না হলে পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পানি বাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে

তিনি আরও বলেন, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নারী শিশুসহ কয়েক শতাধিক মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কংস নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা ধোবাউড়া উপজেলার আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘরে মঙ্গলবার সকালে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে বাসিন্দাদের।

এখানকার বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, কংস নদীর পাড়ে আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প হওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে ঘরের চারপাশে পানি। পোলাপান নিয়ে পানির মধ্যে খুব কষ্টে আছি। গতকাল শুধু একটি সংগঠন আমাদের বিরিয়ানি দিয়েছে, প্রশাসন থেকে কেউ কোনো খোঁজ খবর এখনও নেয়নি।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি

সাহাব উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সকালে পানি বাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। নদীর পাশে আমাদের বসবাস। তাই সবসময় আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে। কখন জানি পানি বেড়ে ঘর ডুবে যায়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মিনতি রানী পাল বলেন, বন্যায় পূজার আনন্দ ম্লান হয়েছে। দু'বেলা খাবারই কপালে জুটছে না। তাহলে পূজা কীভাবে করব। সরকার সহযোগিতা করলে অন্তত সন্তান সন্ততি নিয়ে চলতে পারতাম।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, পঞ্চম দিনে সকালের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় পানি কিছুটা বেড়েছে, সেই সঙ্গে নতুন কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা বানভাসি মানুষকে শুকনো খাবারের পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ করছি। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, সকালের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নতুন করে উপজেলার বালিয়া ইউনিয়ন সহ চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৬টি গ্রাম। বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দিনের অবস্থা ভালো থাকলে দুই একদিনের মধ্যে পানি নেমে যেতে পারে।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে হালুয়াঘাটে বন্যার সৃষ্টি হয়। উজানের পানি কমে এখন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এই ১৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাময়িকভাবে তাদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি ক্ষতি নিরূপণ করে সামগ্রিক সহযোগিতা করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হবে।

ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আবু ইউসুফ বলেন, হালুয়াঘাটে ১৬৫, ধোবাউড়ায় ৯০ ও ১৯ বিদ্যালয়সহ তিন উপজেলায় ২৭৪ প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহসিনা খাতুন বলেন, হালুয়াঘাট উপজেলায় মোট প্রতিষ্ঠান ৫৭টি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪টি, আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে ১৭টিতে ও পাঠদান চালু আছে ৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

ধোবাউড়া উপজেলায় মোট প্রতিষ্ঠান ৩৪টি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০টি, আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে ১০টি ও পাঠদান চালু আছে ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

ফুলপুর উপজেলায় মোট ৬০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৯টি ও পাঠদান চালু আছে ৫১ টিতে। মোট ৮৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ আছে।

Related News