বন্যা: ফেনীতে পুনর্বাসন বেসরকারি উদ্যোগই ভরসা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী | 2024-10-12 12:52:46

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর ফের কর্মজীবনে ফিরছে মানুষ। আগস্ট মাসের শেষ ১০ দিন বন্যার প্রকোপে ফেনীর কৃষি, ঘরবাড়িসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এখনো জনপদে স্পষ্ট। এখন চলছে পুনর্বাসনের কাজ। প্রবল বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ১৯ আগস্ট রাতে ডুবতে শুরু করে ফেনীর উত্তরাঞ্চল। এরপর ১০ দিনে সম্পূর্ণ ফেনী জেলা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের মতামত অনুযায়ী বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে বেসরকারি উদ্যোগ ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে, ক্ষতিগ্রস্ত ঘর সংস্কার, পুনঃনির্মাণে সরকারি সহায়তা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। পুনর্বাসনে বেসরকারি উদ্যোগই মূল ভরসা স্থানীয়দের।

বন্যা প্রসঙ্গে ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, বন্যায় ২৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। জেলায় ১১ লাখের অধিক মানুষ এবং ৯৫ শতাংশ এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল। বন্যা দুর্গতদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে বন্যার্তদের জন্য ২ হাজার ৩শ টন চাল, ৮২ লাখ টাকা, ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশুখাদ্যের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

জেলা প্রশাসন হতে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, জেলায় ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর বন্যায় সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং ২ হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া ৫৪টি মসজিদ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মোট ৬ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৪৪টি মন্দিরে ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন হতে প্রাপ্ত তথ্যে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের ৭০৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ১৫ হাজার ৫৯৮ টাকা। এছাড়া নার্সারি ও বনায়নের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৮ টাকা। গভীর, অগভীর এবং হস্তচালিত নলকূপে ক্ষয়ক্ষতি দেখানো হয়েছে ১৪৯ কোটি ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

একই তথ্য, ১ লাখ ২০ হাজার ৪৯০টি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে ১০৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এছাড়া ১০টি হাসপাতাল, ৩টি ক্লিনিক ও ৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৬ কোটি ১০ লাখ ৯ হাজার ২শ টাকা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, ইউএনডিপি ১০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার পরিবারকে ঘর সংস্কারে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে। একইভাবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, রিক ৮৯ লাখ টাকা এবং মাস্তুল ফাউন্ডেশন ১১ লাখ টাকা বসতঘর সংস্কারে সহায়তা দিচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সংস্কার কাজগুলো বাস্তবায়ন হবে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসার অভূতপূর্ব নজির দেখা গেছে। ঘুরে দাঁড়াবে ফেনী শীর্ষক একটি সংগঠন এ পর্যন্ত ১৩টি পরিবারকে নতুন ঘর এবং ক্ষতিগ্রস্ত ঘর সংস্কার করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠক শরীফুল ইসলাম অপু। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ৩৮ পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাচ সদস্য শামছুউদ্দৌলা। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, এমন সহায়তার তালিকা দীর্ঘ।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন এবং নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন পুনর্বাসনে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে তাদের কাজগুলো সমন্বয় করা হচ্ছে।

Related News