পদ্মায় জেলেদের যাযাবর জীবনযাপন, যেখানেই রাইত সেখানেই কাইত!

, জাতীয়

ছাইদুর রহমান নাঈম, শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2024-10-19 12:08:56

‘যেখানেই রাইত, সেখানেই কাইত’ এই প্রবাদ এখন পদ্মা নদীর অনেক জেলেদের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে৷ জেলেদের মধ্যে কেউ সারারাত জেগে মাছ ধরে আবার কেউ আগের দিন মাছ নিয়ে ভোরেই চলে আসে হাটে। ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।

এই দৃশ্য ঢাকার নবাবগঞ্জের মৈনট ঘাট সংলগ্ন বাজারের৷ এখানকার জেলেদের জীবন হচ্ছে যাযাবর। পানিতেই কাটে তাদের ভাসমান জীবন৷ নৌকা-ই যেন তাদের ঘর বাড়ি৷ রান্নাবান্না থেকে শুরু করে দিনের যাবতীয় কাজ তারা নৌকাতেই করে থাকে। পানির স্রোতের সাথে ভেসে ভেসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিরামহীন ছুটে চলা তাদের জীবনের নিত্য সংগ্রাম৷

সরেজমিনে শনিবার গিয়ে দেখা যায়, শিকার করা মাছ বিক্রি করে ঘাটে নৌকায় রান্নার কারছে জেলেরা৷ মাছ বিক্রি করার পরে তাদের চোখেমুখে তৃপ্তির ঢেঁকুর। দেশীয় গান গেয়ে হাসিমুখে রান্নার কাজ করছে তারা৷ এসময় কয়েকজন মাছ শিকারীর সাথে কথা হয়৷ অনেকেই একমাস ধরে নদীতে আছেন৷ মুঠোফোনে পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয়৷ একটি নৌকায় দুজন জেলে থাকেন৷ প্রতিদিন বড়শি দিয়ে তারা মাছ শিকার করেন৷ ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা রোজ বিক্রি করতে পারে মাছ৷ এভাবেই একমাস নদীতে যাযাবর জীবনযাপন করে একমাস পর পর বাড়ি ফিরেন।

পদ্মার পাড়ের মৈনট ঘাটে আপন মনে নৌকার উপরে রান্না করে চলেছে দুজন জেলে। একজন  তরকারি কাটাকাটি করছে অন্যজন চুলায় আগুন দিচ্ছে। সচারাচর  জেলেদের শিকার করা মাছ দিয়েই রান্না হয় প্রতিনিয়ত, সেটির ব্যতিক্রম হয়নি তাদের বেলায়ও। নিজেদের শিকার করা পদ্মা নদীর মাছ দিয়েই রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। একে অপরের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ দেখেই বুঝতে পারা যায় পরস্পরের এই সম্পর্ক যেন কয়েক যুগের।

কথা হলে জানা যায়, নৌকার উপরেই বেশিরভাগ সময় কাটে তাদের, প্রতিদিন সকালে তীরে এসে রাতে শিকার করা মাছ গুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন তারা আর এভাবেই পরিবার চলে জেলেদের। তবে সব সময় বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়না কারন বাড়িতে গেলে মাছ শিকারে ভাটা পড়বে তাই মাসে ১ বার বাড়িতে যায় তারা।

মাছ শিকারী বাশার মোল্লা বার্তা ২৪.কম'কে বলেন,'রাত দিন মাছ ধরি৷ বিক্রি করার পর মনডায় শান্তি লাগে৷ ভাসমান জীবনে কষ্ট নাই৷ এটা আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে৷ মাস শেষে জমানো টাকা গুলো নিয়ে পরিবারের সামনে গেলেই সকল ক্লান্তি দূর হয়।'

আরেক মাছ শিকারী চান্দু মন্ডল বলেন,'নদীতে অনেক সময় ডাকাতি হয়৷ এটা নিয়ে আতংকে থাকি৷ আমাদের জীবনটা নদীর পানির সাথে মিশে গিয়েছে। মাছ এবং পানি আমাদের জীবনের একটা অংশ।'

Related News