আন্দোলনে হত্যা: নীরব তদন্তে জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল, লাগতে পারে দীর্ঘ সময়

, জাতীয়

অভিজিত রায় (কৌশিক) স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2024-10-23 09:05:54

দেশব্যাপী কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পতন ঘটে তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার। তবে আন্দোলন দমিয়ে সরকার পতন ঠেকাতে চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ। অনেক প্রাণের বিনিময়ে আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নিলে সবশেষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দীর্ঘ দুই মাস (জুলাই ও আগস্ট) গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড তদন্তে ঢাকা অবস্থান করছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। নীরবে তদন্ত চালিয়ে তথ্যানুসন্ধানে কাজ চলছে দলটি। এক মাসেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি দলটি।

অনুসন্ধান শেষ করতে আরও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও দলটির তথ্যানুসন্ধান শেষ হলেও পরবর্তীতে আরও একাধিক টিম আসতে পারে বলেও ধারণা তাদের।

বাংলাদেশের জাতিসংঘ অফিসের মুখপাত্র আনাহিতা আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, তারা জেনেভা থেকে এসেছেন। প্রথমে একটা মিশন এসেছিল, যেটাকে স্কোপি মিশন বলে। তাদের কাজ ছিল কাজের পরিধি, এটা ম্যাপ করে গেছে। এখন যারা এসেছে, তারা মূলত এসেছে তদন্ত করতে। সব তথ্য সংগ্রহ করে সেটা লিপিবদ্ধ করতে। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন চলে গেছেন আবার, কয়েকজন থাকছেন; কাজের পরিধি এবং ডিম্যান্ড অনুযায়ী তারা আছেন। তারা কতদিন কাজ করবেন, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। যেহেতু এখনও তদন্ত চলছে। তদন্তে কেস যত জমা পড়বে অথবা অভিযোগ বা তথ্য যত জমা পড়বে, তার উপর ওপর নির্ভর করছে যে তারা কতদিন থাকবে। এভাবেই কাজ চলছে।

তিনি বলেন, তারা খুব গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করছেন। যাদের সঙ্গে কাজ করছেন যাদের সম্পর্কে অভিযোগ বা তথ্য পাচ্ছেন তাদের ছাড়া তারা কারোর সাথে কোন যোগাযোগ করছেন না। খুব গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করছেন, যাতে তারা নিরপেক্ষ থাকতে পারেন এবং তাদের কাজে যেন কোন বাধা না পড়ে।

বর্তমানে কতজনের তদন্ত দল দেশে কাজ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা আমরা জানি না। আমরা যারা জাতিসংঘের সমন্বয়কারী অফিসে বসি, আমাদের কারোর সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই।

বর্তমানে তথ্যানুসন্ধানকারী দলের কাজ শেষ হলে অন্য কোন দল আবার আসতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে তথ্যের অনেক লেয়ার আছে। সরকার একটা তথ্য বলছে। সমন্বয়কারীরা আরেকটা তথ্য বলছে। এই তথ্য যাচাইবাছাই করার পর এটা বুঝতে হবে। আপনি যদি বিশ্বের অন্যান্য অনুসন্ধানগুলো দেখে থাকেন, তাহলে দেখবেন কোনকিছুই কিন্তু একটা মিশনে সম্পন্ন হয়নি। সব মিশনেই ভলিউম-১, ভলিউম-২ এভাবে আছে। তাই এটা তাদের কাজের উপর নির্ভর করে। যদি তারা কাজ শেষ করতে পারে, তাহলে একটা মিশনেই হয়ে যাবে। আর যদি কাজ শেষ করতে না পারে, আর তারা যে অনুমান করেছিল তারচেয়ে বেশি অভিযোগ পায়, তাহলে হয়তো তারা আরও মিশন করতে হতে পারে। কবে নাগাদ অনুসন্ধান শেষ হতে পারে সেটার বিষয়েও নির্দিষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না। তারা বলেছেন, আপনারা এই এড্রেসে অভিযোগ জমা দেন, তথ্য জমা দেন। তাদের দেয়া এই তথ্যটা আমাদের একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেছে কিনা, বা এখন পর্যন্ত যাচ্ছে কিনা? ঢাকায় বসে একটা মানুষের অভিযোগ বা তথ্য দেয়া যতটা সহজ, একটা প্রত্যন্ত অঞ্চল বা জেলা শহরে বসে কি এতোটা সহজ? সবকিছুই তথ্য সংগ্রহের ওপর নির্ভর করছে।

জাতিসংঘ দলের কর্মপরিধি সম্পর্কে জানা গেছে, তারা ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তদন্ত করবে। ঘটনাগুলোর কারণ (রুট কজ) পর্যালোচনা করবে এবং ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে সুপারিশ করবে।

এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে জাতিসংঘের দল তদন্ত শুরু করে। ওই দিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে। এর মধ্য দিয়ে প্রতিনিধিদলের কার্যক্রম শুরু হয়।

সে সময় এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের তদন্ত দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমরা চাই তারা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুক।

সে সময় সূত্র জানায়, তথ্যানুসন্ধান দল সত্য উদঘাটন, দায়-দায়িত্ব চিহ্নিতকরণ; মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণ এবং অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনসমূহ ও তাদের পুনরাবৃত্তি রোধে বাংলাদেশের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। তদন্ত দলকে এক মাস ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, চিকিৎসা পেশাজীবী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা ছিল। ঘটনাস্থলে পরিচালিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উপাত্ত বিশ্লেষণের পর জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস তদন্তের প্রধান ফলাফল, উপসংহার ও সুপারিশসহ একটি বিস্তারিত মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানানো হয়েছিল।

Related News