কোনায় কোনায় লার্ভা! ঢামেকে এসেই কি ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রোগী আর স্বজনরা?

, জাতীয়

জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2024-10-23 13:03:38

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসে সেখানেই নতুন করে ডেঙ্গুভীতিতে দিন কাটছে রোগীদের। অন্য রোগীরাও একই আশঙ্কায় রয়েছেন। ঝুঁকিতে রয়েছেন, রোগীদের সাথে আসা স্বজনরাও।

সাতদিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢামেকে ভর্তি হন মাজাহারুল ইসলাম। । সাথে ছিলেন স্ত্রী ও ছোট ভাই জোবায়ের ইসলাম। এরই তিনদিনে মাথায় জ্বর শুরু হয় জোবায়েরের। সেইসাথে শরীর ব্যথা। ধারণা করা হচ্ছে- তিনিও ডেঙ্গু আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে দিয়েছেন। রিপোর্টের অপেক্ষায় এখন বড়ভাইয়ের বেডেই শুয়ে থাকেন তিনি।

জোবায়েরর ধারণা, তার ডেঙ্গু হলে, তা এই হাসপাতাল থেকেই হয়েছে। বার্তা২৪ কমকে সে কথাই বলছিলেন। তিনি বলেন, গত সাতদিন থেকে বড় ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান করছি। ডাক্তার ও নার্সদের চিকিৎসায় আন্তরিকতা আছে। কিন্তু হাসপাতালের নোংরা পরিবেশে মশার উপদ্রব ভীষণ। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।"

"আমার মনে হয়, বড় ভাইয়ার ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য এসে নিজেও এখন ডেঙ্গু রোগী হয়ে গেছি," বলেন তিনি।। তিনদিন জ্বরে ভোগার পর মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে ডাক্তারের পরামর্শে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে দিয়েছেন বলে জানান।

জোবায়ের ইসলামের মত ঢাকা মেডিকেলে আসা প্রতিটি রোগীর স্বজন মশার কামড়ের কাছে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন। স্বজনদের দাবি হাসপাতালটিতে দিনের আলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে মশার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন তাড়া। অনেকেই রোগীর চিকিৎসা সেবা নিতে এসে নিজেরাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন। কারণ তারা মনে করেন, হাসপাতালের এখানে সেখানে নোংরা পরিবেশে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা থাকতে পারে।

হাসপাতালে রোগীরা রাতে ওয়ার্ডে ও বেডে মশারির নিচে থাকলেও স্বজনরা হাসপাতালের বারান্দায়, এখানে সেখানে খোলা জায়গায় শুয়ে বসে রাত কাটান। সেসব স্থানের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মশারি খাটানোর সুযোগ নেই। নেই কোনো বৈদ্যুতিক পাখাও। এতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ তারা। ফলে হাসপাতাল থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হবার আশংকা তাদের।

রোগীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে হাসপাতালের ভিতরের বিভিন্ন স্থাপনার কোনায়, ভিতরের বিভিন্ন সড়কে পাশে ড্রেনেজে। বেশি খারাপ অবস্থা হাসপাতালের যেসব রুমে এসি রয়েছে ওইসব রুমের বাইরে। কারণ বাইরে টপটপ করে পানি পড়ে জমা হচ্ছে নিচে। বলাই হয়,  জমে থাকা পানিতেই জন্ম নেয় এডিসের লার্ভা।হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে নতুন ভবনের যাওয়ার রাস্তায় দু'ভবনের মাঝখানেও এসি থেকে পড়া পানি জমে থাকে। এই জমানো পানির একটু কাছাকাছি গেলেই মশার লার্ভা চোখে পড়ে। রোগীর স্বজনরা ধারণা করছেন এগুলোই এডিসের লার্ভা।

একই অবস্থা হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্লান্টের সামনে। অক্সিজেন প্লান্টের সামনে জমা পানিতেও মশার ডিম ভেসে থাকতে ও মশা উড়তে দেখা যায়।

রোগী ও স্বজনদের আরও অভিযোগ হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরে নিয়মিত সিটি কর্পোরেশন মশার ওষুধ দেয়না। সপ্তাহে একদিন বা দু'দিন ওষুধ দিতে দেখা যায় তাদের।

জমে থাকা পানিতেই জন্ম নেয় এডিসের লার্ভা। ছবি: বার্তা২৪.কম

হাসপাতালটির ভিতর বাইরে মশার উৎপাত নিয়ে হাসপাতালটির পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে হাসপাতালটির অবস্থান ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে হওয়ায় সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা  ডাঃ ফজলে শামসুল কবিরের সাথে কথা হয় বার্তা২৪'র। তিনি বলেন, "হাসপাতাল পরিষ্কার করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের না। এটা তাদের দায়িত্ব। হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের কারণেই সেখানে মশার উৎপাত বেশি।"

হাসপাতালের বাইরে জমা পানি এডিসের লার্ভা হতে পারে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "বাইরে জমা পানিতে এডিসের লার্ভা হয়না। এডিসের লার্ভা হয় ঘরের ভিতরে জমা পানিতে।"

নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধ ছেটানো হয় কিনা- জানতে চাইলে তিনি রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে নিয়মিত আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম চলে। প্রতিদিন আমাদের পরিচন্ন কর্মীরা ওষুধ দিয়ে আসে।

এদিকে বাইরে জমা পানিতে এডিস মশার লার্ভা হয় এডিস মশার লার্ভা উৎপাদন হয়না সিটি কর্পোরেশনের এমন বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। বার্তা২৪ কমকে তিনি বলেন,  " আগে বলা হতো, এডিস শুধু পরিষ্কার জমা ডিম পাড়ে। কিন্তু গত বছরের গবেষণায় দেখা গিয়েছে দেশে এডিসের চরিত্রে পরিবর্তন এসেছে। এখন নোংরা পানিতেও ডিম পাড়ে।"

এমনকি এডিস রাতে নয়, দিনে কামড়ায় এমন প্রচলিত ধারণাটিও বাতিল করে দিয়েছেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞা। তিনি বলেন, "রাত ও দিন দু'বেলায়ই এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েছে।"

ডা. লেলিন চৌধুরীর মতে, ডেঙ্গু শুধু এখন ঢাকায় নয়, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকার, স্থানীয় সরকার ও সামাজিক সংগঠন মিলে যৌথভাবে তিনদিন সারাদেশে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করতে পারে। তাহলে হয়তো কিছুটা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে, পরামর্শ তার। 

এদিকে চলতি বছর শেষ হতে আরও দুই মাসের বেশি সময় বাকি। এরই মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে এডিস মশাবাহিত এই রোগ প্রাণ নিয়েছে ২৫০ জনের। এর মধ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই বেশি।

Related News