নিরাপত্তার চাদরে বঙ্গভবন, বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-10-23 21:20:10

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার পর কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে বঙ্গভবনে। র‌্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

একই সঙ্গে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে দ্বিতীয় দিনেও খণ্ড খণ্ড বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষ। সেইসঙ্গে নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা বঙ্গভবন দেখতে ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৭টার পর অবস্থান নিয়ে বঙ্গভবনের মূল ফটকের সামনের সড়কে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গভবনের চারিদিকে নিরাপত্তা ব্যারিকেডের ওপরে কাঁটাতারের আরও একটি বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। কেউ কেউ তুলছেন ছবি, কেউবা আবার রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়ে মাঝে মধ্যেই দিচ্ছেন স্লোগান।

এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে মাঝে মধ্যেই খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে।


পদত্যাগের দাবিতে বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভে অংশ নেয়া মোজাম্মেল মিয়াজি নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, আপনারা জানেন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তার কাছে পদত্যাগ পত্র আছে। অথচ এখন রাষ্ট্রপতি বলছেন তার কাছে পদত্যাগ পত্র নেই। তার মানে এই রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করছেন।

শেখ হাসিনা যখন গণহত্যা চালিয়েছেন। তখন তিনি কোনো শিক্ষার্থীকে দেখতে যাননি। শিক্ষার্থীদের পক্ষও নেননি। এই রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা বঙ্গবভবন ছেড়ে যাবো না।

এদিকে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বঙ্গবভবনে আসেন জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ ফোরামের নেতা-কর্মীরা। এসময় তারা বঙ্গবভবনের সামনে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রায় ২০ মিনিট বিক্ষোভ করে তাদের মিছিলটি ৫ টা ৫০ মিনিটে দৈনিক বাংলা মোড় দিয়ে চলে যায়।

বঙ্গভবনের সামনে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে ও চারপাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। যাতে করে কোনো আন্দোলনকারী ভেতরে ঢুকতে না পারে। বঙ্গবভনের ফটকের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। এছাড়াও সাদা পোশাকের পুলিশসহ গোয়েন্দা বাহিনী সদস্যরা রয়েছেন। যাতে করে সেখানে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটতে পারে।


এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড টপকে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে একদল বিক্ষোভকারী। এ সময় বঙ্গভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হন অন্তত ৫ জন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনী ও পিজিআর সদস্যরা ব্যারিকেডের সামনে অবস্থান নেয়।

মঙ্গলবারের সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল থেকেই বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নেয় কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই’ ২৪, ৩৬ জুলাই পরিষদ, জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদ, ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র–জনতার মঞ্চের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন।

পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরত কিছু ছাত্রজনতা হঠাৎ নিরাপত্তা ব্যারিকেড টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এসময় আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।


অবস্থান চলাকালীন বিক্ষোভকারীদের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় টিয়ারসেলও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। এতে কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। পরে পুলিশের ওপর চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। সেনা সদস্যরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই।

রাষ্ট্রপতি বলেন, (পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার) বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।

এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।

Related News