চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা | 2024-10-24 11:46:31

চুয়াডাঙ্গায় ক্রমাগত বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। গত দুই মাসে শুধু সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও অনেকে।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু জোনে ৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।

সরেজমিনে সদর হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের পৃথক দুটি জোন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ভর্তি করা হয়েছে সাধারণ রোগীদের। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওয়ার্ডের সাধারণ রোগীদের মধ্যে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। আরও করুণ বিষয় যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের মশারি সরবরাহ করলেও কেউই তা ব্যবহার করছেন না।

রোগীদের অভিযোগ, মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও এখানে কোনো নজরদারি নেই। এমনকি রোগীদের সচেতন করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগও নেই।


ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মামুনুর রহমান অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডে ডেঙ্গু জোন থাকলেও সেখানে সাধারণ রোগীরা শয্যা দখল করে আছেন। ফলে ডেঙ্গু জোনে শয্যা না পেয়ে বাধ্য হয়ে সাধারণ রোগীদের মধ্যে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাকে। তিনি কেন মশারি ব্যবহার করছেন না জানতে চাইলে বলেন, কেউই মশারি ব্যবহার করছে না। তাছাড়া ওয়ার্ডের ফ্লোরে চিকিৎসা নেয়ায় মশারি টাঙানোর সুযোগও পাননি। এছাড়া হাসপাতালের নার্সরাও মশারি টানানোর বিষয়ে তাদের কিছু বলেনি।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট হাসপাতালের প্যাথলজিতে প্রথম সুমন হুসাইন নামের এক রোগীর শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এছাড়া আগস্টেই মোট ৪৬টি নমুনা পরীক্ষায় দুজন পুরুষ ও এক নারীসহ তিনজনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। গত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৫৬। এর মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৮ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারীসহ ৩১ জনের শরীরে। এছাড়া চলতি মাসে বেড়েছে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও শনাক্তের সংখ্যা। গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ৩১৯টি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ৫০ জনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

এসব বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের মশারি দেওয়া হলেও রোগীরা তা ব্যবহার করছেন না। আমরা নিয়মিত তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি।’ তিনি রোগীদের মশারি ব্যবহারে সতর্কতার বিষয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মশারি ব্যবহার না করলে যেসব মশা তাকে কামড় দেবে, সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেরা সংক্রমিত হয়ে অন্য মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে থাকে। তাই বাড়িতে কারো জ্বর হলে এসময় অবশ্যই তাকে দিনে রাতে মশারির ভেতর রাখতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার সময়ও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

হাসপাতালের ডেঙ্গু জোনে সাধারণ রোগীদের অবস্থানের বিষয়ে এই চিকিৎসা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ওয়ার্ডে রোগীর অনেক চাপ ও শয্যা শঙ্কট থাকায় রোগীরা ডেঙ্গু জোনের খালি শয্যায় জোর করেই উঠে পড়ছেন। নার্সদের ক্ষেত্রে তাদেরকে ওয়ার্ড থেকে বের করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে রোগী ও তাদের স্বজনদের সতর্ক হওয়া জরুরি। ডেঙ্গু জোনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে ভাবছি।’

হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন, ‘হাসপাতালে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য আসছেন। হাসপাতালসহ জেলাজুড়ে মশা নিধন কার্যক্রম এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’

Related News