ফেনীর মুহুরী-কহুয়া নদীতে ভাঙন, জনবসতি বিলীনের শঙ্কা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী | 2024-10-24 12:52:01

ফেনীর পরশুরামের মুহুরী ও কহুয়া নদীর তীব্র ভাঙনে স্থানীয় মানুষদের মাঝে আতঙ্ক বেড়েছে। ইতোমধ্যে ফেনীর ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ৯৫টি স্থানে ভাঙনের ফলে বহু বসতি বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া পরশুরামের পূর্ব অনন্তপুর ও দক্ষিণ কোলাপাড়ায় নদী ভাঙনে আরও বহু পরিবার ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে ভাঙনের বিষয়ে জানে না তারা।

জানা গেছে, পরশুরাম বাজারে মুহুরী নদীর (গাঙ্গ হীরা) পাশে পূর্ব অনন্তপুর গ্রামে প্রায় ৪০টি পরিবারের বসবাস। এখানে কহুয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে মুহুরী নদীতে মিশেছে।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে ভাঙনে এখানকার প্রায় ৫০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ঢলু মিয়া, মমতাজ মিয়া, মফিজুর রহমান, অহিদুর রহমান, নুর মিয়া, রবিউল আলম, শাহ আলম ও রিপনের ভিটেবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

দক্ষিণ কাউতলী মৌজার ম্যাপে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের পাশে বিভিন্ন দাগের জমি মুহুরী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জমি, বাগান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় মানুষ। প্রতিদিন ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।

ভিটেবাড়ি হারানো নুর মিয়া জানান, ঘরবাড়ি জমি নদীতে গেছে। গত দুই মাস ধরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় আছি। আয় নেই, ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে, আমাদের দেখার যেন কেউ নেই।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন জানান, গত কয়েক বছরে আমাদের দক্ষিণ কাউতলী মৌজার ৮ থেকে ৯ কানি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এপারে ভেঙে ওপারে চর যে জেগে উঠেছে সেগুলো আমাদের জমি।

নদী পাড়ের বাসিন্দা কাজী নুরুল করিম জানান, যে কোনো সময় বাড়ি জমি নদীতে ভেঙে পড়তে পারে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। তবে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কহুয়া নদীর পাশে দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। বন্যায় নদী পাড় ভেঙে কয়েকটি পরিবারের জমি, টিউবওয়েল ও টয়লেট নদীতে পড়েছে।

কহুয়া নদীর পাশের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানান, বাড়ির যে জায়গাটুকু বাকি আছে, তাও যে কোন সময় নদীতে ভেঙে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে টয়লেটসহ টিউবওয়েল নদীতে ভেসে গেছে।

দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুল্লাহ জানান, কহুয়া নদীর পাশে যদি দ্রুত ব্লক বসানো না হয় তাহলে পরশুরাম থানা, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন্যা পরবর্তীতে এ ভাঙন আতঙ্ক আরও তীব্র হয়েছে। আমরা এর দ্রুত নিরসন চাই।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন সেকশন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট ভাঙন এলাকা পরিদর্শনের পর প্রতিবেদন পেলে ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related News