রংপুরে বেড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুক

, জাতীয়

বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2024-10-24 17:48:12

বিভাগীয় নগরী রংপুরে মৌসুমি ভিক্ষুকের ভিড় বেড়েছে। ব্যস্ত এই শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে সপ্তাহে শনি ও বৃহস্পতিবার বাড়ে মৌসুমি ভিক্ষুক। শহরের ছোট-বড় দোকানগুলোতে খুচরা কিছু টাকা নিতে সারিবদ্ধভাবে মৌসুমি ভিক্ষুকদের উপস্থিতি দেখা যায়।

কেউ চাতালে, কেউ বাসা-বাড়িসহ অন্যান্য কাজ করে থাকেন তারা। কাজ না থাকায় পেটের তাগিদে মৌসুমি ভিক্ষুক হিসেবে দূর-দূরান্ত থেকে শহরে ভিড় জমান এই মৌসুমি ভিক্ষুকরা।

রংপুর মহানগরীতে শহরের আনাচে কানাচে ছোট-বড় দোকানে কাঁধে একটি টোটব্যাগ নিয়ে ছুটতে দেখা যায় তাদের। নিজেদের মধ্যে খুঁনসুটি করার দৃশ্যও চোখে পড়ে।

রংপুর নগরীর ভুরার ঘাট এলাকার বাসিন্দা জমিলা বেগম বলেন, ভিক্ষা না করে কোনো উপায় নেই। কাইয়ো না দ্যাকে, ছইল পইল ধরি খাও কি প্যাটতো ভোক মানে না। এ্যালা খ্যাত নিরানি কাম, ধান শুকানির কাজ নাই। বসি থাকি তো আর প্যাট ভরে না। হামার কোনো ভাতা নাই,কিছু নাই। শনিবার আর বৃহস্পতিবার শহর ঘুরি। কোনোদিন ১ হাজার টাকা, কোনোদিন ৫০০-৬০০ টাকা হয়। সংসার চালাবার জইনতে শহর ঘুরিয়া ২-৪ টাকা যাই পাও কনমতে প্যাটের খোরাক হয়।


পীরগাছা থেকে আসা মৌসুমি ভিক্ষুক মুন্নী বলেন, বিধবা মানুষ। স্বামী নাই, ভিক্ষা করবার মন চাই না। কিন্তু সংসার চালাবার জইনতে শহরত আসিয়া কালেকশন করি। কখনও আলু তোলা কাম করো, কখনো ধান শুকান, মাড়াই যেটা পাও তাই করো। এল্যা তো কাম নাই গ্রামের ওতি। কি আর করি খাই। ৪টা ছাওয়া নিয়া খরচতো আর কম না। সব জিনিসের মেলা দাম। দুই খান হাত ধরিয়া যদি কাজ না পাও, ভিক্ষা করিয়া কোনোদিন ৪০০ -৬০০ টাকা হয়। কোনদিন ১ হাজার টাকাও পার হয়৷ তাকে দিয়া টানিটুনি বাড়ি খরচ চলে। এলা স্বামী স্ত্রীরা চাকরি করে জইনতে বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়া খয়রাত পাওয়া যায় না। বাড়ি বাড়ি ঘুরলে চাইল ছাড়া ট্যাকা দেয় না, এইজনতে শহরে আসি। আর কিছুদিন পর ধান কাটামারি হইবে তখন ধানের কাম কটমো।

কাঁধে টোটব্যাগ নিয়ে দলবেঁধে ফুটপাতে ছুটেচলা ৩ জন মৌসুমি ভিক্ষুক বলেন, হামার দুঃখ হামরা বুঝি, খয়রাতে না বেড়েয়া করমু কি। ছাওয়া মানুষ করি এলা ভাত দেয় না। এ্যালাও ধান উঠে নাই গ্যারোস্তের ঘরত কাম নাই। খামো কি, ধান উঠলে ছাড়াই মারাই করিয়া দিন হাজিরা পাই। এলা গ্রামোত কাম নাই, খাওয়াতো বন্ধ থাকে না। সপ্তাহে ২ দিন শহরত আসিয়া কালেকশন হয় ৭০০-১২০০, কোনোদিন বেশি হয়। কাইয়ো টাকা দেয়, কাইয়ো ছাড়ি মারে। এই খয়রাতি টাকা দিয়া কোনোমতে সপ্তাহখান চলে। ভোরের ট্রেনত ৩ জন একসঙ্গে আসি আবার খয়রাত শেষ হইলে ট্রেনত বাড়ি চলি যাই।

নবাবগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী লিফু বলেন, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করতে দান করা। দান গরিবের হক। সপ্তাহে ২ দিন অসহায় ভিক্ষুকদের জন্য কিছু খুচরা টাকা রাখা হয়। সাধ্যমত চেষ্টা করি তাদের না ফেরাতে, তারা এসে নিয়ে যায়।

বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তাদের দুঃখের বাস্তব গল্প। পেটের খোরাক জোগাতে গ্রাম থেকে পা বাড়িয়েছেন শহরমুখে। কাজ না থাকায় অভাব ঘোচাতে অনবরত ছুটে চলছেন প্রতিটি দোকানে। কেউ টাকা দিচ্ছেন, কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছেন এই ভিক্ষুকদের ৷ মৌসুমি কাজের এই মানুষগুলোর জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ভিক্ষাবৃত্তি এমনটি বলছেন তারা।

Related News