ফসলি জমিতে ব্যাটারি পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে সিসা, হুমকিতে পরিবেশ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ | 2024-11-07 14:59:06

সারি সারি রাখা হয়েছে পুরাতন ব্যাটারি। প্রায় অর্ধেক দামে কেনা অটোরিকশার পুরাতন ব্যাটারিতে থাকা অ্যাসিড বের করে খুলে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পার্টস। আলাদা করা হচ্ছে প্লাস্টিক ও সীসা। দিনে ব্যাটারি ভাঙার কাজ করা হলেও রাতের অন্ধকারে তৈরি হয় সীসা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের জলাহার এলাকায় অবৈধভাবে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে সীসা তৈরির কারখানা। প্রশাসনের নজর এড়াতে কাপড়, টিন ও ইট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে কারখানার আশপাশ। ব্যাটারি পুড়ানোর কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত অ্যাসিড ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ক্ষতি হচ্ছে এই এলাকার প্রধান অর্থকারী ফসল ধানের। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন আশপাশের মানুষজন।

পুরাতন ব্যাটারি থেকে বের হওয়া অ্যাসিড ছাড়া হচ্ছে সেচ কাজের বড় নালায়। নালা থেকে সেচের মাধ্যমে এসব বিষাক্ত পানি যাচ্ছে ফসলি জমিতে। এতে ফলন কমার পাশাপাশি ধানে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ-বালাই। স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা বলছেন, জনবসতিহীন এলাকা হওয়ায় নির্জনতার সুযোগে এই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।

জানা যায়, পুরাতন ব্যাটারির এই কারখানায় কাজ করা বেশিরভাগ কর্মচারী বগুড়া ও গাইবান্ধার। তারা ব্যাটারির সব যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করে পুড়িয়ে তা বগুড়ায় পাঠায়। সেখানে নতুন ব্যাটারিতে পুনরায় এসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়। শ্রমিকরা বলছেন, এখানে দৈনিক ১০০-১৫০টি ব্যাটারির যন্ত্রাংশ খোলা ও আগুনে পোড়ানো হয়।

পুরাতন ব্যাটারি থেকে খোলা হচ্ছে পার্টস

স্থানীয়রা জানায়, রাত গভীর হলেই পোড়ানো হয় পুরাতন ব্যাটারির বিভিন্ন পদার্থ। আগুনে পুড়িয়ে পুরাতন ব্যাটারি থেকে ভিতরের সিসা বের করা হয়। পরে এসব পোড়া ব্যাটারির নির্গত সিসা ও অন্যান্য পদার্থ পুনরায় ব্যাটারি তৈরির কারখানায় বিক্রি করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে যখন ব্যাটারি জ্বালানো হয়, তখন আশপাশের ৩ কিলোমিটার জুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে আশেপাশের ফসলি জমিতে অ্যাসিড ছড়িয়ে পড়েছে।

কারখানার পাশেই ৮ বিঘা ফসসি জমি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামোশংকরবাটি এলাকার তরিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, কারখানাটি স্থাপনের ফলে আমার ধান পুড়ে গেছে। এমনকি আশেপাশের সব জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ফসল নষ্ট হচ্ছে। বলতে গেলে তারা বলছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করা আছে। তোমাদের যা ইচ্ছে করো।

কৃষক হানিফ আলী জানান, রাতের বেলা পুরাতন ব্যাটারিতে আগুন দেওয়া হয়। সে সময় বিশাল কুণ্ডলী তৈরি হয়। ব্যাপক গন্ধযুক্ত ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠে বাতাস।

কারখানা মালিকদের দাবি, এসব কর্মকাণ্ডে পরিবেশ ও ফসলের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় না। তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি তারা।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, জনজীবন ও ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ব্যাটারি কারখানা। ফসলি জমির মাঝে এমন কারখানার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related News