পাবনায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মৎস্যজীবী দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জালাল উদ্দিন (৪০) হত্যার জেরে আসামিপক্ষের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, জালাল উদ্দিন হত্যার দিন থেকে হেমায়েতপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় অন্তত ৫ থেকে ৭টি বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছাড়া হামলার শিকার পরিবারগুলো।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, নিহত জালালের ভাই লাবু হোসেন রোববার রাতে মামলা করেছেন। এতে ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল হেমায়েতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সদস্য মুন্তাজ আলির সঙ্গে একই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম পক্ষের। গত শুক্রবার রাতে এলাকার ইসলামি জলসা নিয়ে দুই পক্ষের বাকবিতণ্ডা হয়। এরই জেরে শনিবার সকালে বেতেপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হন। তাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে আবুল হাসেমের অনুসারী জালালের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
এরপরই, শনিবার রাতে ও রোববার দিনভর মন্তাজের অনুসারীদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় হাসেমের লোকজন।
মন্তাজ অনুসারীদের দাবি, হাসেমের অনুসারীরা হেমায়েতপুর মানসিক হাসপাতাল এলাকায় জেলা যুবদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হাসান আলী, রেজাউল করিম, মোহাম্মাদ আলীর বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মামলা হামলা আতঙ্কে এসব বাড়ি পুরুষ শূন্য। দুএকটি ব্যতীত অধিকাংশ বাড়িতে পরিবারের নারী সদস্যরাও নেই। হামলার শিকার পরিবারগুলোর অভিযোগ, প্রায় শত লোকের একটি দুর্বৃত্তের দল বিভিন্ন সময় লোহার রড, চাপাতি, হাসুয়া ও বাঁশের লাঠিসোঁটা নিয়ে বাড়িগুলোতে হামলা চালায়। এ সময় বাড়িতে থাকা গরু, ছাগল, মোটরসাইকেল, গহনা, টাকা পয়সাসহ আসবাবপত্রও লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর শেষে দেওয়া হয় আগুন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাজনীতি বা হত্যার সাথে সম্পৃক্ত নন এমন অনেক পরিবারের ওপরও এ হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এখনো হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। অভিযোগ জানানোর পরেও প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না বলেও জানান তারা।
হামলার শিকার পাবনা জেলা যুবদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হাসান ও তার পরিবার। তিনি পলাতক থাকায় কথা হয় তার স্ত্রী সুমি খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, হঠাৎ আমাদের বাড়িতে খবর এলো শত শত লোক হামলা করতে আসছে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে হাসেমের নেতৃত্বে মানিক, আকাশ রিদ্দিক ও স্বপনসহ দলবল এসে ভাঙচুর শুরু করে। ঘরে নগদ টাকা পয়সা ছিলো সে সবকিছু লুটে নিয়ে গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।