কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামে রাতের আঁধারে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এতে একদিকে নদী ভাঙনের কবলে পড়ছে গ্রামের ফসলি জমিসহ মানুষের বসত বাড়ি। ইতোমধ্যে ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শতাধিক পরিবার।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) ভোরে রামপ্রসাদের চর গ্রামের পাড় ঘেঁষে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের নলচর গ্রামের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই ড্রেজিং কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে দিনের পরিবর্তে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, নলচর গ্রামের আঃ বারেক, তার ছেলে মহসিন, আলী হোসেন ও হাসনাত প্রধান, হাবিবুল্লার ছেলে মো. রবিউল ইসলাম রবি, সোবহান মিয়ার ছেলে মো. জোয়েল এবং আক্কাস আলীর ছেলে মো. টিটু এই কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত। ব্যবহৃত ড্রেজারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হলো ‘এমবি তানসিল জিসান এন্টারপ্রাইজ’, ‘আল-মদিনা এন্টারপ্রাইজ’, ‘এমবি সরকার এন্টারপ্রাইজ’, ‘আল্লাহর রাসূল এন্টারপ্রাইজ’, ‘রিয়া সুপার-১,২,৩,৪’ এবং ‘এমবি তোহা লোডিং ড্রেজার’।
৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১২ অক্টোবর চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ একটি ড্রেজার জব্দ করে। এরপর ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে দুজনকে আটক করা হলেও অপরাধীদের কার্যক্রম থামেনি।
রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা হোসাইন মোহাম্মদ মহসিন বলেন, কয়েক বছর আগে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আবার রাতের আঁধারে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। নদীর এক তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিন ধরে চালিভাঙ্গা ও রামপ্রসাদের চর এলাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। তারা সরকারি আইন অমান্য করে প্রভাব খাটিয়ে নিজেদেরে ইচ্ছেমত বালু উত্তোলন করছে। পাশাপাশি নদীপথে চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অপরাধেও তারা জড়িত।
এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে অভিযুক্ত মো. রবিউল ইসলাম রবির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের ইজারা বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর বিগত দুই বছর বা উলুত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বর্তমানে তা আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে মুসলিমা বলেন, মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য সরকারি কোনো অনুমোদন নেই। যেকোনো ধরনের বালু উত্তোলনই অবৈধ। যারা ইতোমধ্যে এই কাজের সঙ্গে জড়িত বা ভবিষ্যতে জড়াবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসন এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে এবং অবৈধ কার্যক্রম প্রতিহত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।