মজুরি বাড়ায় শ্রমিক সংকটে রংপুরের কৃষকরা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2024-11-26 17:37:46

রংপুরে নাবান্নের আমেজে আমন মৌসুমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। নতুন ধান ঘরে তুলতে মাঠে ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষক ও শ্রমিকদের। গ্রামীণ প্রকৃতির চারিদিকে তাকালে চোখে পড়ে বিস্তৃত মাঠজুড়ে যেন হলুদ চাদরে বিছিয়ে আছে সোনালী ফসল। মাঠজুড়ে ফসল কাটার ধুম পড়েছে কৃষকদের।

তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে এবছর শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। দৈনিক ৬০০-৮০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক কাজে লাগানো নিম্ন-মধ্যবিত্ত কৃষকদের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য।

রংপুর মহানগরীসহ হারাগাছ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মাঠজুড়ে ধান কাটার ধুম পড়েছে। ভরা মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে মজুরি। অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ মজুরি বেড়ে শ্রমিক সংকটে পড়েছে কৃষকরা।

মজুরি বাড়ায় শ্রমিক সংকটে রংপুরের কৃষকরা

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতার সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে চলতি আমন মৌসুমে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন। রংপুর জেলার মানুষের চালের চাহিদা হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাল উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলের পাশাপাশি প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের জমিতে এবার খুব বেশি সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। সময়মতো জমিতে বৃষ্টির পানি দিয়ে চারা রোপণ এবং অপেক্ষাকৃত কম সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কৃষক তাজিদুল আমন ধান কাটা ও মাড়াই করা নিয়ে বলেন, ‘ধান কাটা-মারি শুরু হইছে, কিন্তু শ্রমিকরা মজুরি বেশি চায়। এল্যা চারিদিকে কাম বেশি তাগো কামের অভাব নাই। ৫০০-৮০০ টাকা ছাড়া কাম করে না। অত টাকা দিয়া শ্রমিক মাঠে লাগায়া পোষাবো না। তাই নিরুপায় বউ বাচ্চাদের নিয়া ধান কাটিয়া ঘরে নেয়া।’

নগরীর বোতলাপাড়া গ্রামের বেশ কিছু কৃষক বলেন, ‘জিনিস পাতির দাম বেশি সাথে কামলাদের মজুরিও বাড়তি। ধানক্ষেতে একদিনের কামলা হাজিরা ৬০০-৭০০ টাকা। এত টাকা দিয়া কামলা নেয়া সম্ভব না৷ অন্য সময়ের থাইকা এখন বেশি টাকা মজুরি। কাজের চাপ বেশি তাই বেশি টাকার হাজিয়ায় কাজ করে তারা। আমরা চাহিদা অনুযায়ী ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাচ্ছি না।’

রংপুরের বোতলাপাড়া ধান কাটতে ব্যস্ত থাকা শ্রমিক ইউসুফ, সাজ্জাদ, ক্ষুদি মিয়া বলেন, ধানের ফলন ভালো। কৃষক দাম পায় ভালো শুধু আমাদের মজুরি বাড়াইতে তাদের কষ্ট। সব জিনিসের দাম বেশি। সারাদিন মাঠে খাটিয়া যদি ৬০০-৭০০ টাকা না পাই বউ বাচ্চা নিয়া খামো কি। এখন কাজের চাহিদা আছে, দিনে ৫০০ এর কম হাজিরা নিলে লস হয়া যাবে। আমাদের পোষানি লাগবে।

চলতি মৌসুমের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পরপরই কৃষকরা জমিতে আলুর চারা রোপণ করবেন। আবার অনেকেই বোরো ধানের চারা রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করবেন জমি। ফলে রংপুরে খাদ্য সংকট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

এ বিষয়ে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি মৌসুমে অন্যান্য জেলার তুলনায় রংপুরে আমন ধানের ফলন অসম্ভব ভালো হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল অন্য জেলার চাহিদা মেটাবে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পরপরই কৃষকরা জমিতে আলুর চারা রোপণ করবেন এবং অনেকে বোরো ধানের চারা রোপণ করার জন্য জমি তৈরি করবেন। ফলে খাদ্য রংপুরে সংকট হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা।

Related News