‘ঐক্যবদ্ধ হতে হবে না হয় স্বৈরাচার প্রত্যাবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হবে’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-11-28 18:04:41

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পরিবর্তন হলেও আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, নিজেদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করি তাহলে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত 'রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অতিথিরা এসব কথা বলেন।

মতবিনিময় সভায় অতিথিরা বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৫২ সালের পর থেকেই তাদের নিজস্ব একটা ন্যারেটিভ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। যেখানে ইতিহাসের সত্যকে অর্ধসত্য হিসেবে তুলে ধরেছে। তবে ২৪ এ জনগণ সে ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন যে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগাতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। বিভাজনের সকল অপচেষ্টা ভেঙ্গে দিয়ে গণতান্ত্রিক পথে ফিরতে হবে।

লেখক ও গবেষক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড.সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ৫ আগস্ট নিঃসন্দেহে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কিন্তু এর ফলাফলকে একে অপরে আত্মসাৎ করার জন্য এতই তৎপর হয়ে উঠেছে, এর ফলাফল প্রায় বিফলে যাবে। গত দুই দিন ধরে যে ঘটনা দেখছি চট্টগ্রাম ও অন্যান্য জায়গায় তাতে মনে হচ্ছে দেশে একটা অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে। কালো মেঘ দেখা মানেই ঝড়ের পূর্বাবাস বলছি না কিন্তু কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। কাজেই কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবীদ সকলকেই জাতীয় প্রশ্নে একটা অভিন্ন অবস্থানে দাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যেনো কোনো ক্রমেই স্বৈরাচারের প্রত্যাবর্তনের পথকে সুগম না করি। সেজন্য আমাদের ন্যুনতম কর্তব্য কি? অবশ্যই জনগণের বাহিরে কোনো সরকার গঠন হতে পারে না৷ জনগণের ইচ্ছা প্রকাশের মাধ্যম শুধু নির্বাচন না সেটা দেখেছি আমরা ৫ আগস্ট জনগণের সম্মিলিত অভ্যুত্থান।

সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইদ খান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজ তো পাশাপাশি থেকে লড়াই করেছে। কিন্তু এখন এক দল আরেক দলকে হামলা করেছে। তিন কলেজে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে এটা দুঃখজনক। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, রাজনীতিবিদ সবাইকে পরস্পর যে আত্মঘাতী সংঘর্ষ চলছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। জাতীয় ঐক্যটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যেনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয়৷ সরকারকেও মাথায় রাখতে হবে তাদের কাজটা কি? আমরা উত্তরণের জন্য সেরকম উদ্যোগ দেখছি না।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, ছোট্ট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের দেশের (ভারত) মিডিয়া যেরকম অতিরঞ্জিত করছেন এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন এটাও কোনোভাবে বরদাশত করার মত নয়।

তিনি বলেন, লেখক-শিল্পিদের ভূমিকা অতীতে উচ্ছিষ্টভোগী হিসেবে দেখেছি। যতগুলো রাষ্ট্রের সম্মাননা আছে সেগুলো ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। সেই সব গ্লানি থেকে মুক্তি পাবার একটাই পথ ঐক্যবদ্ধ থাকা।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমাদের বড় ভুল হয়ে গেছে, মুক্তিযুদ্ধের পর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতি যে জোর দেয়ার দরকার ছিলো সেটা আমরা দেইনি। আওয়ামী জোর দেয়নি, আমরাও যেভাবে জোর দেয়া দরকার ছিলো সেভাবে দেইনি।

আমার এই অর্জন কেউ কেড়ে নিতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু আমরা যদি অগ্রগামী না করি তাহলে বিপদ। দানবের এজেন্ডা জিতবে না মানবের এজেন্ডা জিতবে সেখানে সচেতনভাবে আমাদের লেখক-শিল্পীদের সে ভূমিকা পালন করতে হবে।

দেশের জৈষ্ঠ এই বাম রামনীতিবিদ বলেন, আওয়ামী লীগ ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধকে একটা বিকৃত অর্ধসত্য মিলিয়ে একটা ন্যারেটিভ তৈরি করেছিলো। তার অর্থ চিরদিন দরকার, আওয়ামী লীগ সরকার। ওবায়দুল কাদেরও এক ঐতিহাসিক কথা বলেছিলো, যেভাবেই হউক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে, না হয় গাট্টি-পুচকা নিয়ে জেলে যেতে হবে। তারা জানতো বাঘের পিঠে চড়ে নামার আর উপায় নাই। তার জন্য দেশ ধ্বংস হলেও তাদের আপত্তি নেই৷

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পলিটিক্যাল কালচার যদি না হয় সে দেশ গড়বে না। যে জায়গায় আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে যাচ্ছে সেখানে তো কেউ না কেউ যাচ্ছে। তার ফল কি হবে সেজন্য দলগুলোকে জনগণের কাছে লায়েবল করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে পরিবর্তন না হলে কোনো সংস্কার টিকবে না। আজকে মনে হবে সংস্কার হচ্ছে কিন্তু ধীরে ধীরে মলিন হয়ে শেষ হয়ে যাবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কবি-সাহিত্যিকেরা না থাকলে পৃথিবী বাসযোগ্য হতো না। বিপ্লবের পেছনে পেছনে নাকি প্রতিবিপ্লব হাটে, এখন আমরা গণঅভ্যুত্থানের পেছনে পেছনে প্রতি গণঅভ্যুত্থান হাটতে দেখছি৷ ধর্মীয় দাঙ্গা বাধার জন্য যেখানেই অনেকে অপেক্ষা করছিলো সেখানে চট্টগ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ সহমর্মিতা দেখিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রেখেছেন। এই ঐক্যটায় আমাদের বড় সাফল্য।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে সাইফুল হক বলেন, সরকারের বলা উচিত দৌঁড়টা যে শুরু করেছেন সেটা কোথায় আপনারা শেষ করবেন।

জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Related News