বগুড়ায় নিখোঁজ শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার, মামি আটক

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া | 2024-11-29 15:06:07

বগুড়ায় নিখোঁজ মাহাদী হাসান (৪) নামের এক শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় স্থানীয় জনগণ শিশুটিকে হত্যার অভিযোগে তহমিনা নামের এক নারীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে। তহমিনা ওই শিশুটির সম্পর্কে মামী হয়। ওই নারীর ঘরের পাশ থেকে বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার ছাড়াও একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। চিরকুটে মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

মাহাদী হাসান বগুড়া শহরের নিশিন্দারা ধমকপাড়ার শফিকুল ইসলামের ছেলে।

তহমিনার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার জানগ্রামে। তিনি দ্বিতীয় স্বামী আলিফের সাথে নিশিন্দারা ধমকপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) এসএম মঈন উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শিশুটির বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার পর থেকে মাহাদী হাসানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সারাদিন বিভিন্নস্থানে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যার দিকে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। রাতভর পাড়া প্রতিবেশী বিভিন্নস্থানে খোঁজ খবর করতে থাকে। সকাল ৬টার দিকে আলিফের আরেক ভগ্নিপতি তহমিনার ঘরের পেছনে একটি বস্তায় মাহাদির মরদেহ দেখতে পান। এসময় তহমিনা সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করছিলেন।

এছড়াও তহমিনার বাড়ির পেছনের দরজা খোলা দেখে আরো সন্দেহ হয়। পরে প্রতিবেশীরা তার ঘর তল্লাশি করে একটি চিরকুট উদ্ধার করে। সেখানে লেখা রয়েছে "তোমার সন্তানকে ভালভাবে দেখতে হলে গলির মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা রেখে যাও"।

স্থানীয়রা জানান, চিরকুট উদ্ধারের পরেও তহমিনা হত্যার বিষয়ে মুখ না খোলায় তাকে গণপিটুনি দেয়া শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে তহমিনাকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। এসময় স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার না করেই ফিরে আসে।

স্থানীয়রা আরো জানায়, তহমিনার স্বামী আলিফ উদ্দিন বগুড়া সদরের ঘোলাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি গ্রীল মিস্ত্রী। আলিফ উদ্দিন তহমিনাকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। তহমিনার দুইটি সন্তান রয়েছে। সেই সন্তান তার বাবার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার জানগ্রামে রেখেছেন। তিনমাস আগে আলিফ ও তহমিনা ধমকপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত ১৫ দিন ধরে আলিফ ধমকপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন না। নিহত শিশু মাহাদীর মা রুবি বেগম আলিফের খালাতো বোন।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হওয়ার পর পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখতে পান বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তহমিনা শিশুটির হাত ধরে চারমাথা বাস টার্মিনালের দিকে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওই পথ ধরেই তাকে শিশু মাহাদীসহ বাসার দিকে ফিরে যেতে দেখা যায়। এরপর রাতে পুলিশ তহমিনাকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে শিশুটির বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা গণপিটুনি থেকে তহমিনাকে উদ্ধার করলেও এলাকাবাসীর বাধার মুখে শিশুটির মরদেহ রেখে ফিরে আসে। পরে বেলা ১২টার দিকে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, তহমিনা নামের ওই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিছুটা সুস্থ্য হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিশু হত্যা সম্পর্কে তথ্য বের করতে হবে।

Related News