ছয় বছর আগে ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে মাদরাসার ছাত্র, সাধারণ তাবলিগের সাথী ও আলেম-উলামাদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনার বিচারে দাবিতে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে (৩য় তলা) এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তাবলিগের শুরায়ি নেজামের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) গণমাধ্যেমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর সাদপন্থীরা যে বর্বর হামলা চালিয়ে তাবলিগের হাজার হাজার নিরীহ সাথী, আলেম-উলামা ও মাঠ প্রস্তুতির কাজে নিয়োজিত মাদরাসার ছাত্রদের আহত করে- ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমি, মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী, মুফতি আমানুল হক, মাওলানা মাসউদুল কারিম, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা লোকমান মাজহারী ও মুফতি বশির উল্লাহসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ী নেজাম) মুরুব্বিরা উপস্থিত থাকবেন।
কি হয়েছিল সেদিন?
১ ডিসেম্বর ২০১৮। টঙ্গীর ইজতেমার ময়দানে ঘটে লোমহর্ষক ঘটনা। ইজতেমার মুরব্বি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরের মত ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
কিন্তু ৩০ নভেম্বর জোড় ইজতেমায় যোগ দিতে আসা মাওলানা সাদের অনুসারী কয়েক হাজার মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে ঢুকতে গেলে শুরায়ী নেজামের সাথীরা বাধা দেয়। পরে তারা টঙ্গী-উত্তরার বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করে শক্তি সঞ্চয় করে ১ ডিসেম্বর (২০১৮) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জোরপূর্বক ইজতেমা ময়দানের প্রবেশ করতে চাইলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে অপ্রস্তুত থাকায় মাঠের মুসল্লিরা বেশি আহত হয়।
মাওলানা সাদের অনুসারীরা বলে খ্যাত এতাতিরা নিরীহ আলেম-উলামা, মাদরাসার ছাত্র সাধারণ তাবলিগের সাথী ও দ্বীনদার মানুষের ওপর প্রচণ্ড আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের এক তরফা হামলায় ১ জন নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মাদরাসা ছাত্র দেখামাত্র হামলাকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই ওই দিন ইজতেমার ময়দানে উপস্থিত আলেম-উলামা ও মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে এমন কমই আছেন, যারা সেদিন গুরুতর জখমের শিকার হননি। মাদরাসাগুলো সেদিন পরিণত হয়েছিল হাসপাতালে। মর্মান্তিক ওই ঘটনার জন্য হামলাকারীরা এখন পর্যন্ত ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশ করেনি।
ইজতেমার মাঠে ওইদিন মারা যান মুন্সিগঞ্জের ইসমাইল মন্ডল (৭০)। তিনি মুন্সিগঞ্জের নীলপাড়া এলাকার খলিল মন্ডলের ছেলে।
ওইদিনের ঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং তাদের আহত করার অভিযোগে টঙ্গী পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক রাকিবুল হাসান বাদী হয়ে একটি ও মাওলানা আবদুল ওয়াহাব অপর একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার দুইদিন পর দায়ের করা মাওলানা আবদুল ওয়াহাবের (মামলা নং-০২) মামলায় (১৪৩/৪৪৮/৩২৩-২৫/৩০৭/৪২৭) মাওলানা ইলিয়াস, আনিছুর রহমান, ফরিদ শিকদার, মনির হোসেন, ফয়সাল শিকদার, মাকসুদুর রহমান, আব্দুর রউফ, মো. বেলাল হোসেন, বশির উল আমীন, মাসুদ পাটোয়ারী, মুফতি আল আমিনসহ ২৮ জনের নামোল্লেখ করা হয়। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০০-১৫০ জন আসামি রয়েছে।