কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির বাইরে গিয়ে কৃষকরা বস্তায় আদা চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৬৬৫ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে, যা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষকদের জন্য বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।
উপজেলার সেননগর গ্রামের সফল চাষি সিরাজুল ইসলাম বস্তায় আদা চাষে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজের বাড়ির আশপাশের অনাবাদি জায়গা কাজে লাগিয়ে তিনি ১৫০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তার বাগানে উৎপাদিত আদার গুণগত মান এবং ফলন এত ভালো যে, স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।
সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রথমে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু বস্তায় চাষ এতটাই লাভজনক হলো যে এখন তা বাড়তি আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। কম খরচে এবং অল্প পরিশ্রমে ভালো লাভ পাওয়া যায়। শুধু সঠিকভাবে মাটি ও সার মিশিয়ে নিয়মিত পানি দিলেই বস্তায় বাগানের মতোই ফলন হয়।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি শুধু গ্রামীণ কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, শহুরে পরিবেশেও এটি সমান জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বাড়ির ছাদ, বারান্দা কিংবা আশপাশের ফাঁকা জায়গায় সহজেই এই চাষ সম্ভব। ফলে কৃষি থেকে দূরে থাকা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও এ পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এদিকে মেঘনা উপজেলায় বস্তায় আদা চাষ কৃষি উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এর ফলে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিতেও এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহে আলম বলেন, আদা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মসলা ফসল। বস্তায় চাষের অন্যতম সুবিধা হলো কম জায়গায় বেশি ফলন। এতে খরচও কম, অথচ লাভের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য।তাছাড়া এই উপজেলায় আদা চাষ বাড়ানোর জন্য আমরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। সবাই এ পদ্ধতি গ্রহণ করলে পারিবারিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় নিশ্চিত হবে। মেঘনা উপজেলায় এটি কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করবে। তিনি আরও বলেন, সবার উচিত তাদের অপ্রয়োজনীয় জায়গাগুলোকে কাজে লাগিয়ে বস্তায় আদা চাষ শুরু করা। এটি শুধু নিজেকে স্বাবলম্বী করার একটি উপায় নয়, বরং দেশের কৃষি খাতকেও শক্তিশালী করবে।