বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ যাদেরকে খুন করেছে তাদের পরিবারের কাছে গিয়ে বলুক এ ধরনের রাজনীতি চায় কী না, হাসপাতালে পঙ্গুত্ববরণ করে যারা বেঁচে আছে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুক তারা কী চায়, তাহলে জবাব পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, একটা মানুষ অপমানের দায় নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুর চেয়েও নিকৃষ্ট। তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আমরা ধারণা করেছিলাম তারা শপথ নেবে। আর তারা এদেশকে আর জ্বালা-যন্ত্রণা দিবে না। কিন্তু কয়লা ধুইলেও ময়লা যায় না। এটা সাবান দিয়ে ধুইলে আরও কালো হয়। আমরা সাবান দিয়ে ধুইতেছি, আর তারা আরও কালো হচ্ছে। তারা নিজেরাও শান্তিতে নেই, দেশকেও শান্তিতে থাকতে দেবে না।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সিলেট মহানগরীর সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে কর্মী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ডা.শফিকুর রহমান বলেন, জনগণের ভালোবাসা পেলে এমন একটি দেশ গড়বো যেখানে কেউ চাঁদাবাজি করবে না, চাঁদাবাজি বরদাশত করবে না। দেশের এক ইঞ্চি মাটির উপর কারও দখলবাজি চলবে না, চলতে দেওয়াও হবে না। কোনো অফিসে বসে কেউ ঘুষ খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করবে না আর করতে দেওযা হবে না। নারী-পুরুষকে সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তা দেবে। কুরআনের ভিত্তিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গর্ব এবং ইজ্জতের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সেই স্বপ্নের দেশ গড়বো। যেই দেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা কোথাও পাহারা দেওয়া লাগবে না। বরং ঘরে বাইরে এবং সামাজিক ও পেশাগত কাজে একজন নাগরিক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ভোগ করবে। এটা আমরা নিশ্চিত করবো।
জামায়াতের আমির বলেন, যেদিন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে ধংস করার জন্য নেতাদের মাথায় তলোয়ার চালাতে শুরু করলো, আমরা সেদিন বন্ধুদের বলেছিলাম-আমাদের বিরুদ্ধে সরকার অন্যায়ভাবে যুদ্ধ শুরু করেছে। আসুন আমরা একসঙ্গে সেই যুদ্ধের মোকাবিলা করি। তাহলে আর কাউকে আঘাত করার সাহস পাবে না। দেশ বাঁচবে, আপনারাও বাঁচবেন, আমরাও বাঁচবো। সেদিন আমাদের এই আওয়াজ সকলের কাছে পৌঁছায়নি অথবা তারা উপলব্দি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যার মাশুল সাড়ে ১৫ বছর এই জাতিকে দিতে হয়েছে। আমরা বলেছিলাম শুধু আমাদের মাথায় আঘাত করা হয়নি, সবার মাথায় আঘাত করা হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন ক্ষমতা থেকে সরে গেলে বিরোধী শক্তিরা দুইদিনের মধ্যে ৫ লাখ মানুষকে খুন করবে। কিন্তু বাংলার মানুষ প্রমাণ করেছে তারা আওয়ামী লীগের মতো কোনো দুর্বৃত্ত না, পাষণ্ডও না। দেশের মানুষ এখন রাতে ঘুমাতে পারছে, রাত জেগে আর দুর্বৃত্তদের পাহারা দিতে হচ্ছে না। দেশে রক্তের হোলি খেলা বন্ধ হয়ে গেছে।
সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন এবং সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মাশুক আহমদের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
এ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলার আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, মৌলভীবাজার জেলার আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সিলেট জেলার নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও হাফেজ আনওয়ার হোসাইন খান, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াত নেতা মহসিন আহমদ, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, উপাধ্যক্ষ সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শরীফ মাহমুদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার, সিলেট জেলা পশ্চিম ছাত্রশিবিরের সভাপতি মারুফ আহমদ, সাবেক ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, সাবেক গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম।