বিদ্যালয় খোলা থাকাকালীন যে শ্রেণিকক্ষগুলোতে বসে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতেন। ছুটির দিনে বিদ্যালয়ের সেই শ্রেণিকক্ষগুলোতে বসে চিকিৎসকরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন দরিদ্র রোগীদের। শুধু তাই নয় চিকিৎসা সেবা আসা রোগীদের দেয়া হচ্ছে চশমা ও ওষুধ দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণের এমন দৃশ্যের দেখা মিলে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বোকাইনগর ইউনিয়নের মাইজহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাইজহাটি বিদ্যালয় উচ্চ বিদ্যালয়ে।
বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণের ব্যতিক্রম এই আয়োজনটির উদ্যোগ নিয়েছেন বোকাইনগর ইউনিয়নের হাজেরা আসকার দাতব্য চিকিৎসালয়। আর এই আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বাংলাদেশ আই ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন ও রোটারি ক্লাব ঢাকা এবং রোটারি ক্লাব ময়মনসিংহ।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার ছুটির দিন বিদ্যালয় দুটো বন্ধ থাকলেও চিকিৎসক, রোগী, ও তাদের স্বজনদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে বসে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। একদিনের জন্য বিদ্যালয়টি গ্রামবাসীর কাছে হাসপাতালে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের বাইরে বসে রোগীর সিরিয়াল নিচ্ছেন স্বেচ্ছসেবকরা। আর বিদ্যালয় শ্রেণি কক্ষে বসে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। শুধু তাই নয় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী মিলছে বিনামূল্যে ওষুধ।
শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ২০ জন বিশেযজ্ঞ চিকিৎসক একদিনের অস্থায়ী হাসপাতালে এসে প্রায় ২ হাজার ৫শত রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়া হয়। এছাড়াও চোখের রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি ও ওধুধ এবং চশমা দেয়া হয় বিনামূল্যে।
এছাড়াও একদিনের অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে চোখের ছানি রোগে আক্রান্ত ৯৬ জন দরিদ্র রোগী সুসংবাদ পেয়েছেন আয়োজকদের কাছ থেকে। এই ৯৬ জন রোগীকে বিনামূল্যে ছানি অপারেশন ও ওষুধ দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন আয়োজকরা।
চিকিৎসা নিতে আসা নুরুন্নাহার তাবাসুম (২৫) বলেন, শহরে গিয়ে গাইনি বিশেষজ্ঞ দেখালে যাতায়াত ভাড়া, ফি, ওষুধ কেনা সহ অনেক টাকা খরচ হয়। এখানে গাইুনি চিকিৎসক দেখালাম। টাকা লাগলো না। বিনামূল্যে ওষুধও পেয়েছি।
আমারও চিকিৎসা করাইছি, মায়ের সমস্যা ছিলো সেইটাও সমাধান হয়েছে।
বাসাবাড়ি এলাকার নুরুল ইসলাম (৬৫) জানান, মাইকে ঘোষণা শুনে এসেছি, খুব ভালো লেগেছে। ডাক্তার দেখালাম। চোখের পরীক্ষা করালাম। ফ্রি চশমা পেলমা। আয়োজকরা ওষুধ দিলো, কোনো টাকা লাগলো না।
বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ বলেন, আজকে আমাদের এলাকার দরিদ্র রোগীদের জন্য আনন্দের দিন। কারণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা নিতে অনেক ফি দিতে হয়। যেটা দরিদ্র রোগীদের জন্য কষ্টসাধ্য। আর এখানে এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা নিয়ে বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে দরিদ্র রোগীরা হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছে।
আয়োজক তাহসিন আসকর রাজা বলেন, আমরা এই আয়োজনে মধ্য দিয়েই ২৫০০ জন দরিদ্র রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ, এবং চোখের রোগীদের বিনামূল্যে চশমা দিয়েছি। এবং সবচেয়ে আনন্দের বিষয় এখানে চোখের চিকিৎসা নিতে আসা ৯৬ জন ছানি রোগী পেয়েছি। আমরা তাদেরকে নিজ খরচে ঢাকা নিয়ে ছানি অপারেশন করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গৌরীপুর পৌঁছে দিবো।