গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এসিল্যান্ড সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অবিদীয় মার্ডি হত্যাকাণ্ডের গত ১০ বছরেও শেষ হয়নি বিচার কাজ। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার না পেয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন তার স্বজনরা। ঘটনার পর থেকেই পরিবার, স্বজন ও বিভিন্ন সংগঠন বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
সর্বশেষ শনিবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করে অবিদীয় মার্ডি স্মৃতি রক্ষা কমিটি। দুপুরে অবিদীয় মার্ডির হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবিতে শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশের শুরুতে শহিদ অবিদীয় মার্ডির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সমাবেশে বক্তারা গত ৩ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জের রাজা বিরাট এলাকায় সাঁওতাল পল্লির জুলিয়াস সরেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও মারপিটের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
এসময় বক্তার বলেন, সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের পরিকল্পনায় অবিদীয় মার্ডিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার কথা। অথচ তা না হওয়ায় বিচারের দাবি নিয়ে ১০ বছর ধরে আদালতের দ্বারে ঘুরছেন স্বজনরা। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভুমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাসকে।
এসময় বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, আদিবাসী নেতা বার্ণাবাস টুডু, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর, শহিদের পরিবারের সদস্য হীরা মুরমু, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাড. কুশলাশীষ চক্রবর্ত্তী সাগর, অ্যাড. ফারুক কবির, অ্যাড. শাহনেওয়াজ খান, গোলাম রাব্বানী মুসা, মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলি রানী দেবী, ব্রিটিশ সরেন, নারী নেত্রী নাজমা বেগম, হাসান মোর্শেদ দীপন, মনির হোসেন সুইট, কাজী আব্দুল খালেক, আনিছুর রহমান ময়নুল, সাঁওতাল নেত্রী সুচিত্রা মুরমু তৃষ্ণা প্রমুখ। এর আগে একটি মিছিল গাইবান্ধা জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি অবিদীয় মার্ডি নিজ বাড়ি নওগাঁর ধামুইরহাট থেকে মোটরসাইকেলযোগে গোবিন্দগঞ্জ অফিসে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম আখ খামারের কাটা-ফাসিতলা সড়কের মাঝামাঝি পৌঁছালে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তাঁকে আখ খামারের ভেতরে নিয়ে গিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রেখে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার।
এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, গাইবান্ধার তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ ১৩ জনকে আসামি করে গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন নিহতের বড়ভাই ফাদার স্যামসন মার্ডি।