গ্যাসের দাম বাড়াতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2025-01-20 20:53:41

পেট্রোবাংলার পর গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য ৬ বিতরণ কোম্পানিও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) প্রস্তাব জমা দিয়েছে। ডি-নথিতে পেট্রোবাংলার মতোই হুবহু ফরমায়েশি প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এমনকি দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতার ব্যাখ্যাও পেট্রোবাংলা প্রস্তাবের কপি পেষ্ট করা হয়েছে। এলএনজি আমদানির খরচ বেশি, তাই দাম বাড়ানো প্রয়োজন। অতীতে প্রস্তাবে দাম বাড়ালে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে তার ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলেও এবার তার লেশমাত্র নেই। না পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে, না বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবে। সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বিষয়টি।

বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, কয়েকটি বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাব এসেছে। এগুলো নিয়ে কাজ করছে টেকনিক্যাল কমিটি। আমরা যাই করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্তে আসতে চাই। কেউ যেনো প্রশ্ন তুলতে না পারে, বিইআরসি বিলম্ব করেছে।

গত ৬ জানুয়ারি বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রেখে নতুন শিল্প কারখানার বয়লার ও শিল্প কারখানার জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। বিদ্যমান গ্রাহকদের অপরিবর্তিত রেখে প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।

আইনগতভাবে পেট্রোবাংলার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নেই। কেবলমাত্র লাইসেন্সী দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারেন। সে কারণে বিতরণের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের কাছে মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব চেয়ে চিঠি দেয় বিইআরসি।

অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন বিতরণ কোম্পানিগুলো। তারা কেউই শিল্প ও ক্যাপটিভে ১৫২ শতাংশ দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা দেখছেন না। একাধিক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পেট্রোবাংলা আমাদের কাঁধে বন্দুক রেখে দাম বাড়াতে চাইছে। গণশুনানিতে ভোক্তাদের মুখোমুখি হতে হবে আমাদেক। অথচ আমরা এই দাম বাড়ানোর সঙ্গে মোটেই একমত নই। আমরা যতটুকু জেনেছি মন্ত্রণালয়ের চাওয়ার অনুযায়ী নতুন দর ফর্মুলা প্রস্তুত করা হয়েছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট গ্যাস কেনা হয়। এরপর বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার।

পেট্রোবাংলার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলেছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫.৭২ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলার ঘাটতি হবে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা অবিলম্বে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবী জানিয়েছেন। ওই প্রস্তাব অনুমোদন হলে শিল্পায়ন বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

পেট্রোবাংলা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করার জন্য টেকনিক্যাল গঠন করেছে বিইআরসি। নিয়ম অনুযায়ি টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর গণশুনানি নিয়ে আদেশ দেওয়া হয়।

Related News