মহাবিশ্বের গভীরে একটি বিশালাকৃতির ব্ল্যাকহোল মহাজাগতিক বস্তু উদগীরণ করে চলেছে- এমন একটি ঘটনা আবিষ্কার করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মহাশূন্য গবেষণা সংস্থা নাসা, ভারতের মহাশূন্য গবেষণা সংস্থা ইসরো, হাবল টেলিস্কোপসহ আরো কয়েকটি মিশন।
জানা যায়, বিশালাকৃতির ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি অবস্থিত একটি নক্ষত্র (স্টার), অন্য একটি ছোট ব্ল্যাকহোল মহাকর্ষীয় শক্তির বলের কারণে কাছাকাছি এসে সংঘর্ষ ঘটার পর, তা বিশালাকৃতির ব্ল্যাকহোলের ভেতরে ঢুকে যায়। এরপর সে ব্ল্যাকহোল থেকে মহাজাগতিক বস্তু ছিটকে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
নাসার পর্যবেক্ষণ যন্ত্র চন্দ্র, আইএনসিআর, দূর মহাশূন্যে স্থাপিত হাবল টেলিস্কোপ, ভারতের অ্যাস্ট্রোস্যাট বিশালাকৃতির ব্ল্যাকহোলের ভেতরে ঘটে চলা এমন সব ঘটনার দৃশ্য আবিষ্কার করেছে বলে ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি এ তথ্য জানায়।
সংবাদমাধ্যমটি ১১ অক্টোবর (শুক্রবার) এক প্রতিবেদনে জানায়, বিশালাকৃতির ব্ল্যাকহোলকে দুটি মহাজাগতিক বস্তু বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এর একটি ছিল নক্ষত্র। পরে এটি মারা গিয়ে ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়ে বিশালাকৃতির ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় বলের টানের কারণে এর ভেতরে চলে যায়। আরেকটি ছোট আকারের ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে এই মৃত নক্ষত্রের ৪৮ ঘণ্টার পর পর সংঘর্ষ ঘটছে। আর এতে করে মহাজাগতিক বস্তু উদগীরণ করছে।
পেছনের কথা
২০১৯ সালের দিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন, একটি নক্ষত্র বিশালাকৃতির ব্ল্যাকহোলের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। তীব্র মহাকর্ষীয় শক্তির বলে এটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এরপর এগুলো একটি চাকতির আকার ধারণ করে।
অনেক বছর এ অবস্থায় থাকার পর সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা খেয়াল করলেন, সেই চাকতিটি আকারে আরো বড় হয়েছে এবং অন্য একটি দ্বিতীয় বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটছে। এই বস্তু কোনো একটি নক্ষত্র বা ছোটখাটো ব্ল্যাকহোল হতে পারে, যা আগে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আবর্তিত হচ্ছিল।
এখন এই দুটি বস্তুর প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পর পর সংঘর্ষের পর মহাজাগতিক বস্তু উদগীরণ করছে।
এ বিষয়ে কুইনস ইউনির্ভাসিটি বেলফাস্টের ম্যাট নিচোল বলেন, বিষয়টি এমনভাবে কল্পনা করা যেতে পারে যে, একজন ডুবুরি সুইমিংপুলে ডুব দিচ্ছেন আবার উঠে আসছেন। এর ফলে তার চারদিকে মহাজাগতিক বস্তু ছিটকে বের হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, এটা ঘটছে এই কারণে যে, একটি নক্ষত্র বা স্টার একটি ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে বিপুল আকারের শক্তি উৎপন্ন করছে।
অতিসম্প্রতি, আরো জানা গেছে, এই শক্তি থেকে এক্সরে বিচ্ছুরিত হচ্ছে। এই উজ্জ্বল এক্সরে একটি গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে নিয়মিত বিরতি দিয়ে দিয়ে এখানে উপস্থিত হচ্ছে। যদিও এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনলোজি (এমআইটি)-এর ধীরাজ পশম বলেন, আমরা এখন এটির প্রমাণ পেয়েছি যে, দুটি রহস্যময় বস্তু একই সঙ্গে দুটি ঘটনার সমাধান দিচ্ছে। তাহলো ৪৮ ঘণ্টা পর পর তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটছে এবং তা থেকে মহাজাগতিক বস্তু ছিটকে বের হচ্ছে।