নিত্যব্যবহার্য ব্যক্তিগত প্রসাধন সামগ্রী ঘরের বায়ুদূষণ ঘটাতে পারে। এর মধ্যে সাবান, কসমেটিকসসহ আরো নানান সামগ্রী রয়েছে, যা রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে বানানো হয়। এসব রাসায়নিক দ্রব্য ঘরের বায়ুদূষণ ঘটায় বলে নতুন একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
ইপিএফএল-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তিগত নিত্যব্যবহার্য প্রসাধনী ঘরে বাতাসের মানের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এ সব প্রসাধনী সামগ্রী ২শ ধরনের (ভিওসি-এস) জৈবযোগ তৈরি করে। এই সব যৌগ যখন ওজোন গ্যাসের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তখন নতুন ধরনের যৌগ ও অতিক্ষুদ্র কণা তৈরি করে এবং সে অতিক্ষুদ্র কণা আমাদের ফুসফুসের ভেতরে গিয়ে জমা হয়। এসব ক্ষুদ্র কণা আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষতি করে থাকে।
তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি যে, এইসব যৌগ বা ক্ষুদ্র কণা আমাদের শ্বাসপ্রশাসের কোন ধরনের ক্ষতি করে।
ইপিএফএল-এর সহকারী অধ্যাপক ডুসান লিসিনা এবং তার সহযোগী মিলে রোজকার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রসাধনী সামগ্রীর একটি তালিকা তৈরি করেন। এর মধ্যে পরিচিত কোম্পানির লোশন, পারফিউম, ডিওডরেন্ট এবং শুকনো শ্যাম্পুও ছিল।
এরপর লিসিনা জার্মানির ফ্রিইবোর্গে মানুষের ব্যবহারের একটি ল্যাব তৈরি করেন। এই ল্যাবে মানুষের ঘরের মতোই ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করা হয় এবং বায়ুর মান পরীক্ষার একটি মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়।
এই সব প্রসাধন সামগ্রী স্বাস্থ্যে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে জার্মান ও সুইডেনের গবেষকদেরও এই গবেষণায় যুক্ত করা হয়।
একটি গবেষণায় তারা ঘরের বায়ুতে এসব প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারের প্রভাব খুব নিবিড়ভাবে মনিটরিংয়ের জন্য কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করেন।
অন্য একটি গবেষণায় তারা ল্যাবে সাধারণ ঘরের খোলা পরিবেশে ওজোন গ্যাস প্রবেশের পরিবেশ তৈরি করেন, যেমনটা একটা প্রিন্টার ঘরে রাখলে যেমন হয় আরকী!
গবেষকরা অতি আধুনিক ৫ ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপন করেন, যা গ্যাস এবং অতিক্ষুদ্র কণার পরিমাণ এবং এর প্রভাব পরিমাপ করা যায়।
এইভাবে তারা ২ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান।
প্রথম পরীক্ষার মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, ওজোন গ্যাসের অনুপস্থিতিতে ২শ নিত্য ব্যবহার্য প্রসাধনী সামগ্রী ভেন্টিলেশন কমিয়ে দিয়েছে। এই পরীক্ষায় ইথানল ও মনোটারপেনসের অস্তিত্ব খুঁজে পান, যা এইসব সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু যখনই চেম্বারে ওজোন গ্যাস যুক্ত করা হয়, তখন এসব ২শ ধরনের জৈবযোগ ও অতি ক্ষুদ্রকণা তৈরি করে। বিশেষ করে পারফিউম ও স্প্রে-তে এ সব বেশি তৈরি হয়।
এই ধরনের বায়ুদূষণ মূলত ডাউন জুরিখের চেয়েও খুব বেশি দূষিত শহরেই দেখা যায়।
এ বিষয়ে গবেষক লিসিনা বলেন, এসব ২শ ধরনের জৈবযোগ আরো কিছু জৈবযৌগ তৈরি করে। এসব অতিকায় ক্ষুদ্রকায় কণা মানুষের ফুসফুসের ভেতরে গিয়ে জমা হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি যে, মানুষের স্বাস্থ্যে এগুলো কতটা ক্ষতিকর। তবে এসব যৌগ আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের স্থানগুলোতে প্রভাব বিস্তার করে।
এই প্রভাব বুঝতে হলে আমাদের আরো বিষাক্তকরণের ওপর গবেষণা করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন আমাদের বুঝতে সুবিধা করবে যে, ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী ধরনের পন্থা আমাদের ব্যবহার করতে হবে।
-টেক এক্সপ্লোরিস্ট.কম অবলম্বনে