সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে আমাদের গ্রহ পৃথিবী। এই অক্ষপথ ধরে অনবরত পৃথিবীর ঘূর্ণনও একটা নিয়ম বজায় রাখে। তাছাড়া পৃথিবী নিজ অক্ষরেখায়ও একইসময়ে নিজগতিতে ঘুরছে। এই ঘূর্ণনের কারণেই পৃথিবীর একেকস্থানে সূর্যর আলো একেকভাবে পড়ে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে দিন-রাত সংঘটিত হওয়ার কারণ এটিই। এই দিন-রাত তারতম্যের চক্রাকারে আজকের দিন উপসি্থত হয়েছে। আজকের রাত বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম রাত হতে চলেছে।
আজ ২১ ডিসেম্বর (শনিবার) পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে আজ বছরের সবচেয়ে বড় রাত। বাংলা তারিখ মতে আজ ৬ পৌষ কৃষ্ণপক্ষের ৬ষ্ঠী তিথি চলছে। তবে আজকের নয়, বরং আগামী কালকের দিন (২২ ডিসেম্বর) হবে বছরের সবচেয়ে ছোট দিন। কারণ চলতি বছর উইন্টার সলসটিস অর্থাৎ সূর্যের দক্ষিণায়ন পড়েছে ২১-২২ ডিসেম্বর। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা বেজে ২৭ মিনিট থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা বেজে ৫৭ মিনিট পর্যন্ত থাকবে সূর্যের দক্ষিণায়ন। এই দক্ষিণায়ন চলাকালীন আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল হবে বৃহস্পতি গ্রহ। একই কারণে পৃথিবীর বিপরীত পাশে দক্ষিণ গোলার্ধে এর ঠিক বিপরীতভাবে দিন-রাতের তারতম্য থাকবে। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের গতিপ্রকৃতির ফলে এমনটা হয়।
আজ যেমন উত্তর গোলার্ধে রাত দীর্ঘতম, দক্ষিণ গোলার্ধে তেমন দিন দীর্ঘতম। আবার চলতি সময় থেকে গণনা শুরু করলে বছরের ঠিক উল্টো পাশের সময়ে দিন-রাতের এই তারতম্য বিপরীত রূপে কাজ করবে। বছরের সেই সময়টা হলো ২১ জুন। সেই দিন উত্তর গোলার্ধে হবে দীর্ঘতম দিন, আর রাত হবে বছরের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম রাত। একইভাবে পৃথিবীর ঠিক বিপরীত পাশে অর্থাৎ দক্ষিণ গোলার্ধে দিন রাত সম্পূর্ণ বিপরীত দৈর্ঘ্যর হবে। তবে বছরে আরও দু’টি বিশেষ তারিখ আছে। সেগুলো হলো, ২৩ সেপ্টেম্বর এবং ২১ মার্চ। এই দুই তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রি সমান হয়। কেননা, এই দু’টো সময় (দিন)-ই সূর্য বিষুবরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়।
সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবী আপন মেরুরেখায় কক্ষপথের সঙ্গে ৬৬.৫° কোণে হেলে থাকে। পৃথিবী ৬৬.৫° কোণ করে চলার কারণে ২১ মার্চ সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেদিন সর্বত্র দিবারাত্রি সমান থাকে। এরপর ধীরে ধীরে সূর্যের কিরণ উত্তর গোলার্ধের দিকে যেতে থাকে।
সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে ২১ জুন পৃথিবী এক জায়গায় আসে যে তখন সূর্যের রশ্মি ভূপৃষ্ঠের ২৩.৫ উত্তর অক্ষাংশে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে পড়ে। এ সময় উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকে। সে কারণে এই সময় উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য তাপমাত্রাও বেশি হয়ে থাকে। উত্তর গোলার্ধে ২১ জুন দীর্ঘতম দিন ও ক্ষুদ্রতম রাত হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর মার্চের মতো সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বাভাবে করণ দেয়। সেদিন সর্বত্র দিবারাত্রি সমান থাকে। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আবার সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে কিরণ বেশি দিতে থাকে ২২ ডিসেম্বর এমনভাবে কোণ করে থাকে তাতে দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন এবং উত্তর গোলারে সবচেয়ে দিন হয়।
শীতকালে মজার কিছু দিকের মধ্যে অন্যতম হলো, এসময় দিন ছোট থাকে এবং রাত বড়। তবে আজ সারাবছরের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম রাত। পৃথিবীর যে ঘূর্ণন অক্ষে চলে অর্থাৎ আহ্নিক গতি, এরফলেই দিন-রাত হয়। অক্ষীয় গতি পৃথিবীর কক্ষপথের অক্ষের সাপেক্ষে ঋতু পরিবর্তনের কারণে পৃষ্ঠে বসবাসকারী প্রাণির জন্য দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্যের তারতম্য ঘটায়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই দিনটিকে উত্তর গোলার্ধে শীতের শুরু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল হিসাবে বিবেচনা করেন। সৌরজগতের নিয়ম অনুযায়ী, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরার সময় একদিকে একটু হেলে থাকে। ফলে কখনো উত্তর গোলার্ধ সূর্যের কাছাকাছি আছে, আবার কখনো দক্ষিণ গোলার্ধ। ২১ জুন দিনটাতে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের কাছাকাছি থাকে। তাই সূর্যের রশ্মি দীর্ঘসময় পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে পড়ে। সূর্য এদিন কর্কটক্রান্তি রেখায় লম্বভাবে বা খাড়াভাবে কিরণ দেয়। তাই মনে হয় দিন শেষই হচ্ছে না। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে দেশগুলিতে বেশি পরিমাণ সূর্যালোক পৌঁছায়। এর ফলে এই সময়কালে সেইসব দেশে গ্রীষ্মকাল থাকে।