একসঙ্গে মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হলো দম্পতির

  • সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

একসঙ্গে মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হলো দম্পতির

একসঙ্গে মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হলো দম্পতির

ভালোবেসে জীবনসঙ্গীকে মানুষ কতই না প্রতিশ্রুতি দেয়। বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচবো, মরলে একসঙ্গেই মরবো। এমন বাক্যও বিনিময় হয় অনেক। তবে জন্ম-মৃত্যুর পূর্ব নির্ধারিত খাতায় এ অংক মেলে ক’জনের। স্বেচ্ছায় আত্মাহুতিতে এমন প্রতিশ্রুতি হয়তো কারো কারোর জীবনে বাস্তবায়িত হলেও স্বাভাবিকভাবে কজনেরইবা এমন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়। তবে এমনই এক দম্পতির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামে।

৬০ বছরের সংসার জীবনে সুখী দম্পতি আব্দুল কাদের শেখ (৮৫) ও জাহানারা বেগমের (৭৫) একই দিনে মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। পাশাপাশি হয়েছে দাফনও।

বিজ্ঞাপন

গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে স্ত্রী জাহানারা বেগমের মৃত্যুর ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ২০ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে মারা যান স্বামী আব্দুল কাদের শেখ। আব্দুল কাদের শেখ আলাদীপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দুপুরে একসঙ্গে জানাজা শেষে গুচ্ছগ্রামের পাশের কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয় এই দম্পতিকে।

স্বজনরা জানায়, আব্দুল কাদের ও জাহানারা বেগম দম্পতির জীবদ্দশায় চাওয়া ছিল তাদের মৃত্যু যেন একই দিনে হয়। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে গত ১৮ নভেম্বর বিকেলে আব্দুল কাদের ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা আলাদা অলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহানারা বেগম। তার মরদেহ স্বামীর বাড়িতে না নিয়ে একই ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে নেওয়া হয়। তবে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর স্বামী আব্দুল কাদেরের কাছে গোপন রাখা হয়। গভীর রাতে এ খবর জানতে পেরে ভেঙে পড়েন আব্দুল কাদের। রাতেই পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করে হাসপাতাল থেকে তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন।

সকালে পরিবারের লোকজন আব্দুল কাদেরকে স্ত্রীর মরদেহ দেখানোর জন্য তার শ্বশুর বাড়ি ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামে আনার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় স্ত্রীর মরদেহ দেখার আগেই সকাল ৯টার দিকে মারা যান আব্দুল কাদের। পরে তার মরদেহ স্ত্রীর কাছে নিয়ে আসা হয়। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর গোসলসহ অন্যান্য ধর্মীয় কাজ শেষে দুপুরে তাদের মরদেহ আলাদীপুর এক নম্বর কলোনি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় এনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আব্দুল কাদেরের বসতভিটা আলাদীপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামের পাশের কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়।

আব্দুল কাদেরের ছেলে লতিফ শেখ বলেন, ৬০ বছরের সংসার জীবনে আমার বাবা-মা অনেক মিল মহব্বতে থাকতেন। তাদের চাওয়া ছিল একসঙ্গে যেন তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারেন। রাতে মায়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর বাবা চিৎকার করে মাকে উদ্দেশ করে বলছিলেন, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে, আমিও তোমার কাছে আসতেছি। সকালে মায়ের মরদেহ দেখার আগেই বাবা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। সবাই আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন।

আব্দুল কাদেরের প্রতিবেশী খোরশেদ আলম বলেন, কাদের ভাই ও তার স্ত্রী বেঁচে থাকতে সব সময় কামনা করতেন একসঙ্গেই যেন তাদের মৃত্যু হয়। তারা মরণেও পাশাপাশি কবরে থাকতে চেয়েছিলেন। অবশেষে অলৌকিকভাবে তাদের সেই ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তারা পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। আমি মনে করি এটা স্বামী-স্ত্রীর জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ্ তাদের বেহেশতবাসী করুন।

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি বিস্ময়কর। স্বামী-স্ত্রীর একই দিনে স্বাভাবিক মৃত্যু তেমন দেখা যায় না।