পাগলা মসজিদে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা পাওয়া গেল
জাতীয়
অবশেষে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে পাওয়া ২৯ বস্তা টাকা গণনা শেষ হয়েছে। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অর্থাৎ ১১ ঘণ্টা গণনা শেষে মোট টাকা মিলেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এটা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, ব্যাংকের কর্মকর্তা ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা গণনার কাজে অংশ নেয়।
বিজ্ঞাপন
এদিন সকালে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতে দানের সিন্দুকগুলো খোলা হয়। পাগলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স ও একটি ট্যাঙ্ক থেকে এবার রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। পরে মসজিদ কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় টাকাগুলো গণনার কাজ শুরু হয়।
এর আগে, সর্বশেষ ১৭ আগস্ট পাগলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ৩ মাস ২৬ দিনে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
তার আগে, একই বছরের ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল।
এছাড়া ২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে।
কমিটি সূত্রে জানা যায়, ছয় তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প করা হবে। এতে মসজিদ-মাদরাসাসহ অর্ধলাখ মুসল্লি যাতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন, এ রকম আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। প্রকৌশলীরা যাচাই-বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। কাজ শুরু হলে খরচ বাড়তেও পারে।
পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়ে থাকে।
এখন পর্যন্ত পাগলা মসজিদের মোট কত টাকা জমা হলো?
টাকা গণনাকালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খানকে সংবাদকর্মীরা প্রশ্ন করেন, পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে সর্বমোট কত টাকা রয়েছে? কিন্তু তিনি এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যান।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়াকেও একই প্রশ্ন করা হয়। তিনিও এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না। জেলা প্রশাসক সভাপতি। উনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমাদের জানতে দেন না।
হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে ভারতকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সহায়তা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন পরামর্শ দেন।
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘যদি ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য সহায়তা বাড়িয়ে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ।’
উল্লেখ্য, সোমবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার সময় হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তাব দেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে সংসদে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অন্য দেশ। এটা আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। প্রয়োজনে ওই দেশে কেন্দ্রীয় সরকার শান্তির বার্তা নিয়ে প্রতিনিধি পাঠাক। কেন্দ্র জাতিসংঘের কাছে আবেদন করুক, শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য।’
এ বিষয়ে একটি লিখিত প্রস্তাবও কেন্দ্র সরকারকে দেবেন বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পিরোজপুর ডিবি পুলিশের অভিযানে ওমর ফারুক খান নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে ৪ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (২ নভেম্বর) বিকেলে জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা বাজার এলাকার সড়ক থেকে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার ওমর ফারুক খান(২৭) পিরোজপুর সদর উপজেলার শিকদারমল্লিক ইউনিয়নের জুজখোলা গ্রামের হাবিবুর রহমান খানের পুত্র।
পিরোজপুরের ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, মাদকদ্রব্য উদ্ধারের বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময় জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা বাজার এলাকার সড়ক থেকে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ওমর ফারুক খানকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার গাঁজার বাজার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা।
পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম এন্ড অপস) মুকিত হাসান খান জানান, পিরোজপুর জেলাকে মাদকমুক্ত করতে জেলা পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের দিকনির্দেশনায় পিরোজপুর জেলাকে মাদকমুক্ত করতে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া অভিযানে গ্রেফতার ওমর ফারুক খানের নামে নাজিরপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুল হালিম মিয়া প্রকাশ মিয়া সওদাগর (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের বারৈয়ারহাটের দক্ষিণ পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুল হালিম মিয়া উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের একখুলিয়া গ্রামের মৃত আবুল কালামের পুত্র। তিনি নাজিরহাট বাজার ব্যবসায়ী।
স্থানীয়রা জানায়, নাজিরহাট থেকে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে সড়কের দাঁড়িয়ে থাকা পাথরবোঝায় ট্রাকের সাথে স্বজোড়ে ধাক্কা লেগে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে পথচারীরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে দায়িত্বরত চিকিৎস তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাজিরহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাবুদ্দীন।
রাজশাহীতে ক্রমেই বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা। এতে শহরের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গ্যাংগুলোর সক্রিয়তা বৃদ্ধি ও তাদের কর্মকাণ্ডে পুলিশের কার্যকারিতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কিশোর গ্যাংগুলো আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কিশোর গ্যাং চক্র ধরতে ডাটাবেজ তৈরি করেছিল। সেই ডাটাবেজ থেকে সন্দেহভাজন কিশোরদের আটক করা হতো। পরে তাদের মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হতো। এছাড়া সিসিটিভির মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করত পুলিশ।
তবে ৫ আগস্ট গণভ্যূত্থানে রাজশাহীর সিএন্ডবি এলাকায় আরএমপি হেডকোয়ার্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। এর ফলে সেই কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজ হারিয়ে যায়।
সাম্প্রতিক রাজশাহীতে একের পর এক খুন, ছিনতাই, চুরি, ইভটিজিং ও চাঁদাবাজির ঘটনায় জনসাধারণ চরম আতঙ্কে রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের ‘আশকারায়’ কিশোর গ্যাং চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, আসামিদের তথ্য দিলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং ‘ব্যস্ততা’ দেখিয়ে দায় এড়াচ্ছে।
নগরীর ভদ্রা মোড়, সিএন্ডবি, লক্ষিপুর, টিকাপাড়া, কেদুর মোড়, হোসনিগঞ্জ বেতপট্টি, পাঠানপাড়া, কলাবাগান, অলোকার মোড়, হেতম খা, নিউ মার্কেট, তালাইমারি, বিমান বন্দর সড়ক, গ্রেটার রোড, রেলওয়ে স্টেশন, শিরোইল কাঁচা বাজার এলাকা এবং সিটি বাইপাসসহ প্রায় ১৫-২০টি স্থানে কিশোর গ্যাং সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে।
এই গ্যাং সদস্যরা পথচারী ও অটোরিকশাযাত্রীদের টার্গেট করে। তারা প্রকাশ্যে টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে।
নগরীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা বিভিন্ন কিশোর গ্যাং আবারও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের নজরদারির অভাবে নতুন নতুন গ্রুপও তৈরি হচ্ছে। ছিনতাই ও ছুরিকাঘাত যেন নিত্যদিনের ঘটনা। মোটরসাইকেল নিয়ে হচ্ছে বেশিরভাগ ছিনতাই। সর্বশেষ কয়েকদিনে ডজনখানেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসবের বেশিরভাগই বোয়ালিয়া থানা এলাকায়।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছেন ট্রান্সপরেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাল বাংলাদেশের সদস্য প্রকৌশলী রাবেয়া বারি। তাৎক্ষণিকভাবে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি। তবে থানায় অভিযোগ করার সময় একটি ফোন কলে জানানো হয় ব্যক্তি পাওয়া গেছে কিন্তু ব্যাগের ফোন টাকা পয়সা এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।
রাবেয়া বারি বলেন, ভাঙড়িপট্টির সামনে মোটরইসাইকেলে করে এসে আমার ব্যাগ ছিনতাই করে দুজন ব্যক্তি। ব্যাগে দুটি এন্ড্রয়েড মোবাইল, ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। পরে থানায় অভিযোগ করতে গেলে একটি ফোন কলে জানানো হয়, ব্যাগটি একটি জায়গায় পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে ব্যাগ পাই। কিন্তু ফোন, টাকাপয়সা আর পাইনি।
তার স্বামী আরিফুর রহমান বলেন, একই জায়গায় দুজন কোরিয়ান নাগরিকের মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ড্রাইভার সজল উদ্দিনের স্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করা হয়। পরে তারা থানায় অভিযোগ দেন। কিন্তু এখনো ছিনতাই হওয়া জিনিস উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সজল বলেন, আমার স্ত্রী ও ছোটবোন দুই সন্তানকে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে দাওয়াত খেয়ে আসছিলেন। রেলগেটে বাস থেকে নামার পর রিকশায় ওঠেন। গয়না ও মোবাইল পার্টস ব্যাগে রেখেছিলেন। ভদ্রার অদূরে রেশম অফিসের বিপরীত দিকে ভাঙড়িপট্টির সামনে মোটরসাইকেলে করে দুজন এসে ব্যাগটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
ড্রাইভার সজলের অভিযোগ, মোবাইল উদ্ধার হওয়ার পর আসামিকে আমি চিহ্নিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলী আকবরকে জানাই। তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে আসামি ধরছেন না, আমার ছিনতাই হওয়া জিনিসও উদ্ধার করছেন না।
এছাড়া গত বছর ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় কচুয়াতৈল এলাকায় পল্লী চিকিৎসক এরশাদ হত্যা এবং একই রাতে বর্ণালী এলাকায় ডা. কাজেম আলীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। ডা. কাজেম খুনের ঘটনায় পুলিশের উচ্চপদস্থ দুই কর্মকর্তা সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকরা।
সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হেমাটলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞা বলেন, আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল কুমারকে ধরলেই খুনের সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
তথ্য বলছে, কিশোর গ্যাং চক্রের নেতাদের প্রত্যেকের রয়েছে দেড়-দুই লাখ টাকা দামের আইফোন। দামি দামি গাড়ি প্রায়ই পরিবর্তন করেন তারা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় আইনের আওতায় আসেন না তারা। তাদের সাথে পুলিশের সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই আলী আকবর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের অলিখিতি ‘বডিগার্ড’ হিসেবে কাজ করতেন। ডাবলু সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও দুজন ছাত্রকে হত্যার মামলায় আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসআই আলী আকবরকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বদলির আদেশের ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো বোয়ালিয়া থানায় রয়েছেন। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এএসআই রানা কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে নানা অপরাধে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশের স্বভাব পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত অপরাধ কমবে না। রাজশাহী নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে থানার ওসিদের সখ্যতা রয়েছে। তারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহীর সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, এসব ঘটনা আমরা কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করেছি। এগুলো রীতিমতো আশঙ্কাজনক ও আতঙ্কজনক। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজ কারোই তেমন ভূমিকা দেখিনি।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মাসুদুর রহমান মুক্তা জানান, নগরীর বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমরা আরও ভালো অবস্থার প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু তা আসেনি। সমাজে অপরাধের এই উত্থান অত্যন্ত হতাশাজনক।
তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রতি আরও সচেতন হন এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেন, তাহলে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর দিতে হবে। এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় প্রশাসন, অভিভাবক এবং সমাজের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি।
এসব বিষয়ে আরএমপির বোয়ালিয়া জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) অনির্বান চাকমা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমাদের এডিসি মিডিয়া একজন আছেন, আপনি তার সাথে কথা বলেন।
এসব ব্যাপারে আরএমপির মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। পুরনো সব ডাটাবেজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা আগের তালিকা নিয়ে কাজ করতে পারছি না। তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু সুফিয়ান জানান, কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যে কোনো অপরাধের তথ্য পাওয়া মাত্রই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তার মেয়ে আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এই তিন জনের ছত্রছায়ায় কিশোরগ্যাং তাদের কার্যক্রম পরিচালনা হতো।