অস্ত্র মামলায় কারাগারে শিশু, ওসির প্রত্যাহার চেয়ে ঢাবিতে মানববন্ধন

  • স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ১৪ বছরের এক শিশুকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগের ঘটনায় টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উখিয়া-টেকনাফের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এই মানববন্ধন করেছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব উখিয়া-টেকনাফ (ডুসাট)।

বিজ্ঞাপন

মানববন্ধনে উখিয়া-টেকনামের শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদিন বলেন, টেকনাফ থানা পুলিশ ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে অস্ত্র মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, শিশুটির বাবাকে না পেয়ে তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের প্রতি সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং তদন্তের স্বার্থে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।

সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, উখিয়া-টেকনাফ প্রশাসনের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধ নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পাহাড়, বন , নদী, খাল ও সরকারি খাস জমি দখলকারীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। টেকনাফে নাফ নদীর জেলের সমস্যার সমাধান করতে হবে। সর্বোপরি টেকনাফ-উখিয়ার শিক্ষার হার কে বৃদ্ধি করে, শিক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান

বিজ্ঞাপন

ফারজানা আক্তার বলেন, আমি ঢাকায় থাকলেও টেকনাফে আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত অপহরণ, সন্ত্রাস এবং নিপীড়নের আতঙ্কে থাকতে হয়। কারণ প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার জন্য কাজ না করে বরং সিন্ডিকেট মেইন্টেন করে এবং টেকনাফকে টাকা বানানোর একটি খনি হিসেবে গ্রহণ করে। নতুন বাংলাদেশে আমরাও টেকনাফের উন্নয়ন আশা করেছিলাম। কিন্তু ১৪ বছরের একজন শিশুকে অস্ত্র মামলায় জেলে পাঠানোর ঘটনায় আমরা আবারও পূর্বের দিনে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমরা দ্রুত এই ঘটনার বিচার চাই।

মানববন্ধনে ডুসাটের সদস্য নুসরাত দশটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো:
১. সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাকে মুক্তি দিতে হবে।

২. টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তদন্তের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।

৪. সন্ত্রাস, মাদক, অপহরণ এবং চাঁদাবাজি নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং একজন অফিসার এক বছরের বেশি যেন দায়িত্বে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. উখিয়া ও টেকনাফে পূর্বে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।

৮. প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৯. রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান করতে হবে।

১০. কাউন্সিলর একরামসহ বিচারবহির্ভূত সকল হত্যাকাণ্ডের তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাউসিফুল করিম রাফি (১৪) কে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গিয়াস উদ্দিন। এরপর আদালত ওই শিশুর জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।