চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৪ জনসহ গত একমাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২৮ জন এবং মারা গেছেন ১৬ জন। যা চলতি বছরের মাসের দিক থেকে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ডেঙ্গু নিয়ে প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৪ জনই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে এ দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ মারা যাননি।
এবছর এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৩ জন। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল ১ হাজার ২৮ জন। এ ছাড়া এবছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। এর মধ্যে নভেম্বর মাসেই মারা গেছেন ১৬ জন।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, চলতি মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই বেড়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগকে সতর্ক করার পাশাপাশি প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতায় লেবানন থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ১০৫ বাংলাদেশি।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে তাদের বহনকারী ফ্লাইট ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) এক বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৩ ডিসেম্বর ৪০ জন এবং ৪ ডিসেম্বর ৬৪ জনকে দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পনেরোটি ফ্লাইটে সর্বমোট ৯৬৩ জন বাংলাদেশিকে লেবানন থেকে দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে।
প্রত্যাবাসন করা এ সব বাংলাদেশি নাগরিককে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তারা। আইওএমের পক্ষ থেকে লেবানন থেকে প্রত্যাবাসন করা প্রত্যেককে ৫০০০ হাজার টাকা, খাদ্য সামগ্রী ও প্রাথমিক মেডিক্যাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
বার্তায় আরও জানানো হয়, লেবাননে চলমান সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থায় যত জন প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক তাদের সবাইকে সরকার নিজ খরচে দেশে ফেরত আনবে। বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য এবং যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি ফিরে আসতে অনিচ্ছুক তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে।
কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে ছোট ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে বড় ভাই মো. জুলহাস মিয়া (৬০) নিহত হয়েছেন।
তিনি সদর উপজেলার বত্রিশ এলাকার মৃত আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে তার মৃত্যু হয়।
জানা যায়, গত ৩ ডিসেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে মো. জুলহাস মিয়ার আপন ছোট ভাই মো. রুবেল মিয়া (৩৬) পারিবারিক শত্রুতার জেরে আচমকা তার পেটে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় জুলহাস মিয়াকে প্রথমে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘ তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ (৬ ডিসেম্বর) সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, পারিবারিক বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে। ঘটনার তদন্ত চলছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ঘটনার পর স্থানীয় জনতা রুবেল মিয়াকে তৎক্ষণাৎ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাকে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করলে আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠায়।
ছোট জাতের চায়না কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ইউনিয়ের লংগাই গ্রামের যুবক মাহফুজ। শুধু কমলা নয়, তার ৪০ শতাংশের বাগানে রয়েছে, মাল্টা, ইয়োলো কিংসহ বিভিন্ন ফলের গাছ। ইউটিউব দেখে পড়াশোনার পাশাপাশি এই ফলের চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ে মাহফুজের। যেই ভাবনা সেই কাজ। শুরু করেন চায়না জাতের কমলার বাগান।
মাহফুজ জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন কমলা চাষ। রাজশাহী থেকে চারা কিনে এনে রোপণ করেন বাগানে। তার বাগানে বর্তমানে ৯৭ টি চায়না ছোট জাতের কমলা রয়েছে, আটটি মাল্টা ও আটটি ইয়োল কিং জাতের মাল্টা গাছ রয়েছে। চার বছর পরিচর্যার পর গত বছর ফলন আসে ৪ মন। তার থেকে ভালো দামে বিক্রি করেন ২ মন কমলা। এ বছর বাগানে প্রায় ৭০ মনের মতো ফল এসেছে। বাজারে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলে কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে বলে আশা করছি। ফলটি মিষ্টি হওয়ায় কারণে শুধু ঈশ্বরগঞ্জে নয়, সারা বাংলাদেশে আমার কমলা পাওয়া যাবে।
শুধু মাহফুজ নয়। এই কমলার বাগনকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে অনেকের। তারা নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছেন কমলা গাছ গুলোর। মাহফুজের বাগানে কাজ করা ফাঞ্জু মিয়া বলেন, এই বাগানে আমরা কাজ করি। এখানে কাজ করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে আমার সংসার চলে।
জহিরুল ইসলাম মাসুম বলেন, আমরা বাগানে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করি না। কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা জৈবিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছি। তাই এই কমলাগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
মাহফুজের এমন সফলতা দেখে আগ্রহ বেড়েছে এলাকার বেকার যুবকদের। তারাও কমলার বাগান করার প্রতি আগ্রহ জানিয়েছেন।
স্থানীয় যুবক জুনায়েদ হাসান জানান, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি একটি জব করছি। আমার বাড়ির পাশেই মাহফুজের কমলার বাগান। বাগানটি দেখে আমারও খুব ভালো লেগেছে। আমি এমন বাগান করার বিষয়ে কৃষি অফিসের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের পরামর্শ নিয়ে আমি বাগান গড়ে তুলব।
আরেক যুবক আরশাফুল ইসলাম সজীব জানান, অনেক বেকার যুবক চাকরির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করছে। তারাও যদি মাহফুজকে দেখে এমন বাগান গড়ে তোলে তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এবং দেশ থেকে বেকারত্ব সমস্যা দূর হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রিপা রানী চৌহান জানান, কৃষি অফিস থেকে কৃষক মাহফুজকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও লেবু জাতীয় ফসল উৎপাদনে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি কমলা, মালটা বা যে কোনো লেবু জাতীয় ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হন তাহলে কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় ২৭ হেক্টর জমিতে লেবু জাতীয় ফসল চাষ করা হচ্ছে। যা থেকে ২১০ মেট্রিক টন ফল উৎপাদিত হচ্ছে।
দেশের উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা ঠাকুরগাঁও। সীমান্তবর্তী এ জেলায় শীতকাল আসলে হিমালয়ের হিম বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। সকাল থেকে সন্ধ্যা দেখা মিলে না সূর্যের আলো। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পরে সাধারণ মানুষের জীবন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। এতে কর্ম হারিয়ে ফেলেন অনেক দিনমজুরসহ খেটে খেয়ে খাওয়া মানুষ।
প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করা শীতপ্রবণ জেলায় বরাদ্দ একেবারে কমানো হয়েছে। প্রতি বছরে চাহিদার অর্ধেক বরাদ্দ পেয়ে থাকেন জেলার সাধারণ মানুষ। আবার সে বরাদ্দের মান ও বিতরণ নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের আলোচনা।
কোনবারের শীতের শুরুতে সহযোগিতা পান না শীতার্তরা। কর্ম হারিয়ে বসে থেকেও কম্বল ছাড়া পান না বাড়তি কোন সহযোগিতা। সেই কম্বল পেতে শেষ নেই ভোগান্তির। যাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয় তারা দিয়ে থাকেন পছন্দের মানুষকে। শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতের সুযোগ সুবিধা চান খেটে খাওয়া মানুষেরা৷
সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের শ্রমিক লতিফুর রহমান বলেন, প্রতিবারে কম্বল ঠান্ডার শেষত দেয়া হয়। তাতে হামার ঠান্ডা শেষ হয়ে যায়। গতবার কম্বল পাইনি, এবারও কম্বল মিলবে না। হামার কষ্ট কমানোর জন্য আগে ভাগে ভালো মানের কম্বল দেওয়া উচিত।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, প্রতিবছরে শীতে কম্বল ও আর্থিক অনুদানের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় চাহিদা৷ এতে দেখা যায়, জেলায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৮,৮০০ পিস কম্বল ও ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২ লাখ পিস কম্বল ও ৫০ লাখ টাকা চাহিদা পাঠানো হয়৷ এর বিপরীতে ২৭,৫০০ পিস কম্বল ও ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৯১০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়৷ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৮০ হাজার পিস কম্বল ও ৪০ লাখ টাকা চাহিদার বিপরীতে ৪৩ হাজার পিস কম্বল ও ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়৷ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৮০ হাজার পিস কম্বল ও ৪০ লাখ টাকা চাহিদা থাকলেও শুধু ৪১ হাজার ৫৫০ পিস কম্বল দেওয়া হয়। আর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৫০ হাজার পিস কম্বল আর ২০ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে প্রতি বছরে চাহিদা কমানোর পাশাপাশি কমে এসেছে বরাদ্দ। চলতি অর্থ বছরে যার অবস্থান একেবারে তলানিতে । শীতে কাবু হওয়া জেলার মানুষের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকল্পনা মাফিক শীতার্তদের পাশে থাকার আহবান সুশীল সমাজের।
ঠাকুরগাঁও জার্নালিস্ট ক্লাবের সভাপতি রেজাউল প্রধান বলেন, প্রতিবারের চেয়ে এবারে চাহিদা কম পাঠানো হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। এতে করে সংগ্রাম আরো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ছিন্নমূল মানুষের। বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে শীতার্তদের পাশে দাড়ানো জরুরি হয়ে পরেছে৷
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছি। এ শীতে আরেক ধাপে চাহিদা পাঠানো হবে। আগের বিতরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবারে আগে ভাগে শীতার্তদের বরাদ্দ তুলে দেওয়া হবে।