নীলফামারী হানাদার মুক্ত দিবস আজ
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে আমরা লাল সবুজের পতাকা আর সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্র অর্জন করি। উত্তরের জেলা নীলফামারী হানাদার মুক্ত হয় ১৩ ডিসেম্বর। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ওড়ানো হয় লাল সবুজের পতাকা। রাস্তায় নেমে আসেন মুক্তিকামী সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ।
১৯৭১ সালে নীলফামারীতে দেশ মাতৃকার টানে ছাত্র-জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তির সংগ্রামে। শুরুতে মিটিং-মিছিল আর সভা সমাবেশের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে আন্দোলন। মহকুমা শহরের অস্ত্রাগারে রক্ষিত অস্ত্র ছিনিয়ে এনে নীলফামারী বড়মাঠে শুরু হয় অস্ত্র হাতে নেয়ার প্রশিক্ষণ।
এরপর ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছয় নম্বর সেক্টরের অধীনে অস্ত্র হাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন যোদ্ধারা। নয় মাসের গেরিলা আক্রমণ আর সম্মুখ যুদ্ধে জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ উপজেলা মুক্ত করে তারা এগিয়ে আসেন নীলফামারী শহরের দিকে।
এই দীর্ঘ সময়ের মুক্তিযুদ্ধে নীলফামারিতে মিজানুর রহমান, আলী হাসান, ক্যাপ্টেন এম এ বাশারসহ ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর থেকে মিত্রবাহিনী আকাশ ও স্থল পথে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। ১১ ও ১২ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর এই আক্রমণ আরও তীব্র হয় ফলে নীলফামারী শহরের বিভিন্ন ক্যাম্পে পাকহানাদার বাহিনী ও তার দোসররা আক্রমণে ভীত হয়ে পিছু হটতে হটতে সৈয়দপুর অবস্থানরত সেনা ব্যারাকে ফিরে যায়। পালিয়ে যাওয়ার খবর আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধারা এরপর ১৩ ডিসেম্বর সকালে জেলা শহরের মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয় ও চৌরঙ্গী মোড়ে অধীনস্থ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। এসময় বীরযোদ্ধাদের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে রাস্তায় নেমে আসেন মুক্তিকামী সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। বিজয়ের উল্লাস আর শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সে সময়ের মহকুমা শহর নীলফামারী।