স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সাহসী কণ্ঠ ছিলেন হেলাল হাফিজ: ড. ইউনূস
জাতীয়
কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) এক শোক বার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যু বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
বিজ্ঞাপন
প্রধান উপদেষ্টা কবির পরকালীন জীবনের শান্তি কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, কবি হেলাল হাফিজ ছিলেন তারুণ্যের শক্তি এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সাহসী কণ্ঠ। তাঁর কালজয়ী কবিতার মতোই তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।
কিশোরগঞ্জে বেড়াতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিনিয়া (৭) নামে এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
নিহত শিশু জিনিয়া (৭) কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপুক্ষিয়া গ্রামের চরপুক্ষিয়া ১নং সরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান সুজন এর মেয়ে। ও একই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার কটিয়াদী থেকে পরিবারের সাথে বেড়াতে গিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরে রাস্তা পারাপারের সময় একটি অটোরিকশার ধাক্কা লেগে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়৷ পরে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে এবং পরে ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া হয়৷ পরে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঢাকা ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়৷ সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যায়। ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শনিবার ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণের দিন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের নিয়ে শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু মানুষকে হত্যা করে তারা।
বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের পর রাজধানীর রায়েরবাজার ইটখোলা ও মিরপুরের বধ্যভূমিসহ ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের চোখ-হাত বাঁধা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
বুদ্ধিজীবী হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আগামীকাল সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার অংশ হিসেবে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন।
এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আগামীকাল বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
রাজশাহী শহরের পথে পথে বাঁশি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন গণেশ চন্দ্র। বাঁশি বিক্রি তার জীবিকা হলেও বাঁশির সুরের সঙ্গে জীবন জড়িয়ে আছে।প্রায় ৪৫ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। একসময় তার বাঁশির সুর শোনার জন্য পথচারীরা আগ্রহ নিয়ে দাঁড়াতেন, তবে আধুনিক সংগীতের নানা মাধ্যম সেই জায়গা অনেকটাই দখল করে নিয়েছে। তবু গণেশ চন্দ্র মনে করেন, বাঁশির সুর কখনো পুরোনো হবে না। তাই এখনো সেই বাঁশি নিয়ে তিনি পথের ধুলো মাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।
তার পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে গণেশ চন্দ্র বলেন, প্রথমে আমার ব্যবসা ভালো চলত। কলেজের ছাত্র-শিক্ষক সবাই বাঁশি কিনত। কিন্তু এখন মোবাইল ফোন, টিভি আর ডিজিটাল মাধ্যমের কারণে সংগীতের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা গণেশ চন্দ্রের তিন ছেলে। সবাই তাদের নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। যা আয় করেন, তা দিয়ে স্ত্রী সাগরী রানি আর নিজের সংসার চালান তিনি।
৪৫ বছর আগে রাজশাহী কলেজের আশেপাশে বাঁশি বিক্রি শুরু করেন গণেশ চন্দ্র। তখনকার দিনে কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয় মানুষের কাছে বাঁশি খুবই জনপ্রিয় ছিল। ‘যখন শুরু করি, তখন সংগীতের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি ছিল। বিভিন্ন কলেজ অনুষ্ঠানে এবং ছাত্রদের আড্ডায় বাঁশি বাজত’, স্মৃতিচারণ করলেন তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও দীর্ঘদিন বাঁশি বিক্রি করেছেন তিনি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বাঘা, নাটোর, বগুড়া সদর ও সান্তাহারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বাঁশি বিক্রি করেছেন।
গণেশ চন্দ্র জানালেন, একসময় তার বাঁশি বিক্রির ব্যবসা ছিল খুবই লাভজনক। ছাত্ররা শখের জন্য বাঁশি কিনত। এক ধরনের সংগীতের পরিবেশ তৈরি হতো। এখন সেই আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে।
আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বাঁশির মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় তিনি উদ্বিগ্ন। স্মার্টফোন, টিভি ও ডিজিটাল মাধ্যমের আধিপত্যে সংগীতের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
এখন প্রতিদিন তিনি ১০০টিরও বেশি বাঁশি নিয়ে বের হন, কিন্তু বেশিরভাগ দিনই কোনো বাঁশি বিক্রি হয় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যবসা চালানো তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গণেশ চন্দ্র নিজের হাতে বাঁশি বানান। বাঁশি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বাঁশ তিনি ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেন। তার বাঁশিগুলোর মূল্য ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। ছোটবেলায় বাবার গানের পরিবেশ দেখে বাঁশির প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা আজও তাকে বাঁশি বাজাতে অনুপ্রাণিত করে।
গণেশ চন্দ্রের জীবন কেবল তার ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প নয়, এটি আধুনিকতার কারণে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সংকটের প্রতিচ্ছবি। এক সময় রাজশাহী কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে সংগীতের প্রতি যে উচ্ছ্বাস ছিল, তা আজ নিতান্তই কমে গেছে।
তবু গণেশ চন্দ্র এখনো বিশ্বাস করেন, সঙ্গীত মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেবে এবং তার পেশা একদিন আবারও প্রাণ পাবে। আজ হয়তো কেউ বাঁশি কিনবে না, কিন্তু একদিন মানুষ ঐতিহ্যের কাছে ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।।
সারাদেশে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা মানুষের। শীতের দাপটে মানুষের বাইরে গিয়ে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
এদিকে দেশের অন্তত তিনটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। পঞ্চগড়, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা এসব জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে প্রকাশিত পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগরের শ্রীলঙ্কা উপকূলে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে এবং গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়টি পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পঞ্চগড় ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা ও পাবনার ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে। আরও আটটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা নেমে এসেছে। সামগ্রিকভাবে সারা দেশের তাপমাত্রা গত এক দিনে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস বলছে, শনিবার দেশের আরও নতুন নতুন এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সামগ্রিকভাবে সারা দেশের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। দিনভর কুয়াশা থাকতে পারে। ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রোববার সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও এতে জানানো হয়েছে।
ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় শৈত্যপ্রবাহ বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে। আগামী দুই দিন ওই শৈত্যপ্রবাহ চলতে পারে। চলতি মাসের বাকি সময়জুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।