বাঁশি বিক্রি আর সুর তুলে ৪৫ বছর পার গণেশের

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাঁশি বিক্রি আর সুর তুলে ৪৫ বছর পার গণেশের

বাঁশি বিক্রি আর সুর তুলে ৪৫ বছর পার গণেশের

রাজশাহী শহরের পথে পথে বাঁশি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন গণেশ চন্দ্র। বাঁশি বিক্রি তার জীবিকা হলেও বাঁশির সুরের সঙ্গে জীবন জড়িয়ে আছে।প্রায় ৪৫ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। একসময় তার বাঁশির সুর শোনার জন্য পথচারীরা আগ্রহ নিয়ে দাঁড়াতেন, তবে আধুনিক সংগীতের নানা মাধ্যম সেই জায়গা অনেকটাই দখল করে নিয়েছে। তবু গণেশ চন্দ্র মনে করেন, বাঁশির সুর কখনো পুরোনো হবে না। তাই এখনো সেই বাঁশি নিয়ে তিনি পথের ধুলো মাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।

তার পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে গণেশ চন্দ্র বলেন, প্রথমে আমার ব্যবসা ভালো চলত। কলেজের ছাত্র-শিক্ষক সবাই বাঁশি কিনত। কিন্তু এখন মোবাইল ফোন, টিভি আর ডিজিটাল মাধ্যমের কারণে সংগীতের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা গণেশ চন্দ্রের তিন ছেলে। সবাই তাদের নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। যা আয় করেন, তা দিয়ে স্ত্রী সাগরী রানি আর নিজের সংসার চালান তিনি।

বাঁশি বিক্রি আর সুর তুলে ৪৫ বছর পার গণেশের

৪৫ বছর আগে রাজশাহী কলেজের আশেপাশে বাঁশি বিক্রি শুরু করেন গণেশ চন্দ্র। তখনকার দিনে কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয় মানুষের কাছে বাঁশি খুবই জনপ্রিয় ছিল। ‘যখন শুরু করি, তখন সংগীতের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি ছিল। বিভিন্ন কলেজ অনুষ্ঠানে এবং ছাত্রদের আড্ডায় বাঁশি বাজত’, স্মৃতিচারণ করলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও দীর্ঘদিন বাঁশি বিক্রি করেছেন তিনি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বাঘা, নাটোর, বগুড়া সদর ও সান্তাহারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বাঁশি বিক্রি করেছেন।

গণেশ চন্দ্র জানালেন, একসময় তার বাঁশি বিক্রির ব্যবসা ছিল খুবই লাভজনক। ছাত্ররা শখের জন্য বাঁশি কিনত। এক ধরনের সংগীতের পরিবেশ তৈরি হতো। এখন সেই আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে।


আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বাঁশির মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় তিনি উদ্বিগ্ন। স্মার্টফোন, টিভি ও ডিজিটাল মাধ্যমের আধিপত্যে সংগীতের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

এখন প্রতিদিন তিনি ১০০টিরও বেশি বাঁশি নিয়ে বের হন, কিন্তু বেশিরভাগ দিনই কোনো বাঁশি বিক্রি হয় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যবসা চালানো তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গণেশ চন্দ্র নিজের হাতে বাঁশি বানান। বাঁশি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বাঁশ তিনি ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেন। তার বাঁশিগুলোর মূল্য ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। ছোটবেলায় বাবার গানের পরিবেশ দেখে বাঁশির প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা আজও তাকে বাঁশি বাজাতে অনুপ্রাণিত করে।

গণেশ চন্দ্রের জীবন কেবল তার ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প নয়, এটি আধুনিকতার কারণে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সংকটের প্রতিচ্ছবি। এক সময় রাজশাহী কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে সংগীতের প্রতি যে উচ্ছ্বাস ছিল, তা আজ নিতান্তই কমে গেছে।

তবু গণেশ চন্দ্র এখনো বিশ্বাস করেন, সঙ্গীত মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেবে এবং তার পেশা একদিন আবারও প্রাণ পাবে। আজ হয়তো কেউ বাঁশি কিনবে না, কিন্তু একদিন মানুষ ঐতিহ্যের কাছে ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।।