ঢাকার মাত্র ২% শিশুরা পার্ক এবং খেলার মাঠে প্রবেশের সুযোগ পায়। শিশুবান্ধব শহর গড়ে তোলা হলে নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের জন্যই প্রবেশগম্য ও নিরাপদ শহর নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু নগর পরিকল্পনায় শিশুদের মতামতের প্রতিফলন না থাকায় বাংলাদেশে শিশুবান্ধব নগর নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শিশু ও যুববান্ধব রায়ের বাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি এই গবেষণা প্রকল্পটি নেতৃত্ব দিচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নং ওয়ার্ড রায়ের বাজারে বসবাসকারী ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা তাদের আশেপাশের পরিবেশের জন্য যে উন্নতি করতে চায় তার কিছু রূপরেখা দিয়েছে, “রায়ের বাজার টু গ্রো আপ ইন”। আয়োজিত প্রদর্শনীতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
সোমবার (১০ ফ্রেবুয়ারি) গ্যালারি দ্য ইলুশন গ্যালারী’তে চারদিন ব্যাপী “শিশু ও যুব বান্ধব শহর” শীর্ষক নকশা প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
যেখানে শিশু এবং যুবকরা রায়ের বাজারকে ঘিরে তাদের চিন্তাগুলো বিশিষ্ট অতিথিদের কাছে উপস্থাপন করে এবং কিভাবে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন বা বিবেচনায় বিবেচনা করতে পারে।
আয়োজনে কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ জিওগ্রাফি অ্যান্ড প্লানিং-এর প্রজেক্ট লিড ডঃ মাতলুবা খানের সঞ্চালনা ও প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার সিনিয়র এডভাইজার দেবরা ইফরইমসন, যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির ডঃ টম স্মিথ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের ডক্টর মোঃ রাশেদ ভূইয়া, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রমখ।
ডঃ মাতলুবা খান তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, রায়ের বাজারে বসবাসরত দুই শতাধিক অভিভাবক এই গবেষণায় মতামত প্রদানের সুযোগ পেয়েছেন। ফলে আমার জানতে পারি যে, এক-তৃতীয়াংশ শিশু একেবারেই বাইরে খেলা করে না। সড়ক দুর্ঘটনা, অপহরণ, হয়রানির আশঙ্কা, রাস্তা ও উন্মুক্ত স্থানের নিরাপত্তা না থাকা এবং অসামাজিক কার্যকলাপের প্রবণতা শিশুদেরকে বাইরে খেলতে বাধা দেয়। কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ওয়েলসের একটি পাড়ায় 'গ্রাঞ্জ টাউন টু গ্রো আপ ইন' নামে একটি প্রকল্প পরিচালনা করেন। সেটার নজির অনুসরণ করেই প্রকল্পটি পরিচালিত হয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৪ এবং জানুয়ারী ২০২৫ এর মধ্যে, সিরিজ ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই আয়োজনের মাধ্যমে রায়ের বাজারের ২৪০ জন শিক্ষাথী’রা কী পছন্দ করে, কোথায় খেলছে, কী উন্নতি দেখতে চায় এবং অগ্রাধিকারগুলি কী তা তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে। তারা পথচারী-বান্ধব রাস্তা, আশেপাশের এলাকা, অন্তর্ভুক্তিম‚লক খেলার জায়গা, মেয়েদের জন্য উন্নত ও নিরাপত্তা পরিবেশের আহ্বান জানায়।
সভায় বক্তারা বলেন, শিশুদের উন্নয়নকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য রায়ের বাজারে পর্যাপ্ত সবুজ জায়গা এবং খেলার মাঠ নেই, যে মাঠ রযেছে তাও নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং সকলের জন্য সুযোগের অভাবে ব্যবহার অনুপোযোগী। এই গবেষণায় শিশুরা তাদের পরযবেক্ষণ ও অর্থপূর্ণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার নিজের এলাকাকে বসবাসযোগ্য করার পরিকল্পনা করে। যার মাধ্যমে ঢাকার বিশদ এলাকা পরিকল্পনাকে রূপ দেওয়া সহজ হতে পারে।
আয়োজন থেকে হাঁটার উপযোগী পরিবেশ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজায়ন, সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, পাবলিক টয়লেট, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং ধুমপানমুক্ত পরিবেশ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি সকল শিশুদের নিয়ে শিশু সমাবেশ আয়োজন করা। যার মাধ্যমে শিশুরা এই সমস্যাগুলো নীতিনির্ধারক ও নগর পরিকল্পনাবিদদের কাছে তুলে ধরতে পারবে।
এছাড়াও চার দিনব্যাপী আয়োজিত নকশা প্রদর্শনীতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা সহকারী এবং ডাব্লউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল; রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, লরেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং ধানমন্ডি কচিকন্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।