বিএনপির জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাবেকে বেশির ভাগ রাজনৈতিক স্বাগত জানিয়েছে। কয়েকটি দল ঐক্য না থাকলে প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা করছে। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, তারা ঐক্যের কথা বলছেন তা মূলত আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে। আর যে কারণে তারা জাতীয় ঐক্য চাইছেন তা হলো অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডে তারা সমন্বয়হীনতা দেখছেন। বিশেষ করে উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ লাগামহীন বক্তব্য দিচ্ছেন। যার সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানের বিরোধ তৈরি হচ্ছে। দলটি মনে করে যে দলগুলোর আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হলে আওয়ামী লীগের ফেরত আসার সুযোগ তৈরি হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বুধবার জাতীয় কবিতা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এমন কিছু কাজ হচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে নানা ঘটনায় দেশে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টাকে দলটি এ প্রশ্নের সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের নিয়ে কেন জাতীয় ঐক্য হবে? আমরা তো তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। জাতীয় ঐক্য তাদের থাকার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। দেশে এখন যা কিছু খারাপ ঘটছে, এর পেছনে তাদের হাত রয়েছে। তাদের ইন্ধনে সবকিছু দেশে ঘটানো হচ্ছে।
কী বলচেন অন্য দলগুলো?
বিএনপির জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, বিএনপি যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। এই মুহূর্তে দেশের পরিবেশ, শান্তি-শৃঙ্খলা যেভাবে বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে তাতে জাতীয় ঐক্যের জরুরি।
বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহবানকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে আমরা ভালোভাবে দেখছি। জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা তৈরি করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারের দেশবিরোধী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিতিশীরতা চলছে তা সমাধানে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, বর্তমানে একটি কঠিন অবস্থা চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র বন্ধে জাতীয় ঐক্য করতে হবে।
চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প দেখছেন না গণতন্ত্র মঞ্চের সংগঠক ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জনগণের মাঝে যে বিভাজন বিভক্তি দেখা দিয়েচে, তা খুবই উদ্বেগের। বিভিন্ন ইস্যুতে ষড়যন্ত্র ও ইসকানি দিয়ে আন্দোলনের চেষ্টা চলছে। প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা থাকে। তাই ছাত্র জনতার ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি।
গণঅধিকার পরিষিদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, দেশে বর্তমানে জাতীয় সংকট চলছে। এ জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন এর প্রস্তাব দিয়েছিলাম কিন্তু সরকার এ পথে হাঁটল না। তাই আবারও ছাত্র-জনতার দৃঢ় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
জাতীয় ঐক্য গঠনে বিএনপি বড় দল হিসেবে যদি এ দায়িত্ব নেয়, তাহলে তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে দেশকে গড়ে তোলার উপলদ্ধি থেকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাককে স্বাগত জানিয়ে হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ছাত্র-জনতার জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই সবাই মিলে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে। আগামী দিনেও জুলুম-বৈষম্য ও ইসকনের মতো জঙ্গিবাদি সংগঠনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।