সরকার জনগণের বাইরে গেলে এক সপ্তাহও টিকতে পারবে না: নুর
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, এই সরকারের প্রতি আমাদের ক্ষোভ আছে, রাগ আছে। প্রয়োজনে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো। আমাদের দাবি আদায়ে বাধ্য করবো। কিন্তু এখনই ফেলে দিতে হবে, এই সরকারকে চলে যেতে হবে, এই লাইনে যাওয়া যাবে না। এ সরকারের জনগণের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জনগণের বাইরে গেলে, জনসমর্থনের বাইরে গেলে তারা এক সপ্তাহ টিকে থাকতে পারবে না।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ কর্তৃক 'ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্য বিরোধী' জাতীয় যুব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নুরুল হক নুর বলেন, অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে গোটা জাতি তাকিয়ে আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, সরকার জাতির মনের আশা আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারছে না। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে সমস্ত রাজনৈতিক দল, শিল্পী, সাহিত্যিক সকলের প্রত্যাশা ছিল এই বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করার জন্য হাসিনার পতন পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার জন্য আন্দোলনের অংশীজনদেরকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। রাষ্ট্র সংস্কার করা হবে। কিন্তু দুঃখজনক আমরা দেখলাম, যাদেরকে আমরা সরকার গঠনের দায়িত্ব দিলাম, তারা তাদের সার্কেলের বন্ধুবান্ধব এবং তাদের লোকজনদেরকে নিয়ে সরকার গঠন করলেন। মানুষকে হতাশ করলেন। আন্দোলনে থাকা নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মনে আঘাত দিলেন। যার ফলে এখন রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত সময়ে নির্বাচন চাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো এখন সরকারের কর্মকাণ্ডে সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার পতনের পরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সংকট তৈরি হয়েছে, আমরা মনে করি এই সংকটের জন্য ভারত দায়ী। সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বার্তা ছিল এবং রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে, ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সেটি স্বাভাবিক ভাবেই চলবে। তবে আওয়ামী লীগকে তারা (ভারত) দাস-দাসীর মতো ব্যবহার করেছে, এই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সরকারকে সেভাবে দাস-দাসীর মতো ব্যবহার করতে পারবে না। ভারতের দিক থেকে আমরা এই চরিত্রগুলো দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম, তাদের আন্তর্জাতিক মানের নেতৃবৃন্দ এবং নাগরিক সমাজ সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন এবং নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, যা একেবারেই ভিত্তিহীন এবং অসত্য।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, আমরা ভারতসহ সমস্ত বিদেশি মিডিয়াকে আমন্ত্রণ জানাবো; আপনারা বাংলাদেশে এসে গ্রামগঞ্জে ঘুরে দেখুন কোথায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, কোথায় মন্দিরে আক্রমণ হয়েছে। যে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো রাজনৈতিকভাবে নয়, আওয়ামী লীগ হয়ে যারা হিন্দু কিংবা মুসলমানদের ওপরে নির্যাতন চালিয়েছে, জনরোষে ও জন ক্ষোভে তাদের নামে মামলা হচ্ছে। কোথাও বিচ্ছিন্ন হামলা-মালার ঘটছে। এটি কোনো সামগ্রিক ঘটনা নয়। কাজেই আমরা ভারতের মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলবো- বিষয়টি সঠিকভাবে আপনারা তুলে ধরবেন।
ডাকসু'র সাবেক এই ভিপি বলেন, বাংলাদেশে আজকে সমগ্র রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়েছে, বিগত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সাথে যে-সকল অন্যায্য এবং দেশ বিরোধী চুক্তি হয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা। একই সাথে বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি ভারতকে জানিয়ে দেওয়া। ভারত যদি আমাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চায়, বন্ধুত্ব করতে চায়, সেই সম্পর্ক হবে দু’দেশের মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ ও ভারতের যে ৫৪টি অভিন্ন নদী, সে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বাংলাদেশ পায়নি। কাজেই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালত থেকে শুরু করে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হন। কিন্তু, আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা এবং তিস্তা চুক্তি আমাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে। ভারত যদি তিস্তা চুক্তিতে সায় না দেয়, প্রয়োজনে আপনারা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। একইসাথে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ প্রতিদিন মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে৷ আমরা বলতে চাই, সীমান্তে একজন বাংলাদেশির লাশ পড়লে আপনারা (বিজিবি) পাল্টা দু'টো লাশ ফেলবেন। উগ্র হিন্দুরা যদি উসকানি বন্ধ না করে তাহলে বাংলাদেশের মানুষও বসে থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও সংস্কার জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক জোট না থাকে তাহলে তার মধ্যে ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসবে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রসারিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার করার প্রয়োজন আছে।