‘আতঙ্কমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে ধ্বংস অনিবার্য’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রের সর্বত্র বিরাজমান আতঙ্ক কাটাতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ চায় বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলেও এখনও দেশের কোথাও স্বস্তি নেই। সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এই আতঙ্ক কাটাতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের বদলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ৫ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন দলটির নেতারা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করা, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে দাবি আদায়ের আন্দোলন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার পরামর্শ দেন নেতারা।

বিজ্ঞাপন

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির নেতারা বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্ম যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলো তাও অনেকটা নিভু নিভু করছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের প্রতি মানুষ যে আস্থা রেখেছিলো তাও কমতে শুরু করেছে। সরকারে থাকা ছাত্রপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদের লোকদেরও দেশপ্রেম নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে যারা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কথা বলছেন তাদের কার্যক্রম সাধারণ মানুষের আস্থা কুড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো না গেলে দেশে অস্থিরতা দিনদিন বাড়তে থাকবে।

নেতারা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের টানা চার মেয়াদে দেশ থেকে সাগরসম টাকা পাচার হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। সমাজের সর্বত্র দুর্নীতি-অনিয়ম জেঁকে বসেছিলো। কিন্তু অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আগের মতো না হলেও টাকা পাচার থেমে নেই। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও আশানুরূপ গতিশীল হচ্ছে না।

বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলের মতো নব্য লুটেরা, চাঁদাবাজরা অনিয়ম করে টাকার পাহাড় গড়ছে। সম্পদের পাহাড় গড়তে থাকা এই মানুষগুলো টাকা পাচারের রাস্তাও খুঁজছে। অন্যদিকে আওয়ামী সুবিধাভোগীরাও অস্বস্তিতে আছে। কখন তাদের উপর কী খরগ নেমে আসে৷ তাদের থেকে চাঁদা আদায় হচ্ছে। বেশীরভাগ শিল্পপতি অস্বস্তিতে রয়েছে। শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শিল্পপতিরা বিদেশে বিনিয়োগের চেষ্টা করছে। যা চলতে থাকলে অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। আর এমন অস্বস্তিকর পরিবেশ বজায় থাকলে সবাই টাকা পাচার অব্যাহত রেখে দেশের ধ্বংস অনিবার্য করে তুলবে। অন্তর্বর্তী সরকার নিজে শতভাগ সৎ থেকে কার্যকর উপায়ে অস্থিরতা কাটানোর চেষ্টা করলে দেশ অস্থিরতা মুক্ত হয়ে উন্নত হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে যেত। অস্থিরতা মুক্ত হলে বিদেশে টাকা পাচার তো দূরের কথা উল্টো পূর্বের পাচারকারীরা নিজেদের টাকা ফেরত এনে বিনিয়োগ করে দেশকে বদলে দিবে।

বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে বক্তারা বলেন, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান না করায় এবং সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখে বিভিন্ন গোষ্ঠী চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। এর ফলে সর্বত্র অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এটি বন্ধ না করা গেলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা আছে।

বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরীর সঞ্চালনায় ও দলের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় মুসলিম লীগের সভাপতি জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আকমল হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিআইআইটির মহাপরিচালক ড. এম আবদুল আজিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল ইউসুফ, ডা. ওয়ালিউর রহমান, মুসলিম ওয়াল্ড এর আহবায়ক ড. মেজর মাসউদুল হাসান, হিন্দু মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব নরেন্দ্রনাথ মজুমদার, ড. জিন বোধি ভিক্ষু, জাতীয় কবিতা মঞ্চের সভাপতি কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ এমদাদ, সানজিদা আনোয়ার চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।