আকাশে তখন শীতের কুয়াশা মাড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে সোনালী সূর্য। এর মাঝেই সোনালী প্রলেপে মোড়ানো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘুরতে এসেছিলো কক্সবাজারে। সেই সোনালী ট্রফি নীল জলরাশীর সমুদ্র পাড়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিলো। বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছেদ্য সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি অনেকে। এই শিরোপা দেখতে ভীড় করেন অনেক ক্রীড়াপ্রেমী দর্শনার্থী। নানা বয়সের মানুষ ট্রফি দেখার জন্য ছুটে আসেন। অনেকেই ট্রফির সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফ্রেম বন্দি করেছেন। তবে ট্রফির প্রদর্শনীর প্রচার-প্রচারণা নিয়ে অভিযোগ করছেন অনেকেই। একারণে অনেকেই জানতেন না ট্রফি আসার কথা।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ট্রফি। যেটি বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রদর্শিত হয়। সকলেই একদম কাছে গিয়ে তুলেছেন ছবি। এর আগে সকাল ১০টায় কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান বোটের সঙ্গে ছবি তোলা হয় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির।
ট্রফি প্রদর্শনী ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয় কঠোরভাবে। মোতায়েন করা হয় র্যাব এবং পুলিশ। সাথে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা সহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা।
নিরাপত্তায় থাকা র্যাব-১৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাইফুল ইসলাম বলেন, র্যাবের ৩০ সদস্যদের একটি টিম নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছি। কোন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। সকলেই আনন্দের নিয়ে ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলছে। এছাড়া পুলিশও দায়িত্বে রয়েছে।
ট্রফি দেখতে আসা আজিজুল হক বলেন, কক্সবাজারের মতো জায়গায় আইসিসির সোনালী ট্রফি একদম কাছ থেকে দেখবো এটা চিন্তাই করিনি। আমাদের ট্রফি প্রদর্শনী অনেক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আশা করি এবারের কাপটা বাংলাদেশই জিতুক।
স্থানীয় বাসিন্দা মঈনুল হোসেন বলেন, এতো বড় একটা ট্রফি উন্মোচন হচ্ছে তবে কোন আয়োজন নেই। এর চেয়ে পাড়ার খেলায় বেশি আয়োজন হয়। প্রচার-প্রচারণা অনেক কম ছিলো। সৈকতে ঘুরতে এসে দেখি ট্রফি প্রদর্শনী হচ্ছে। আগে জানতাম না। পরে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আরেকটু আয়োজন থাকলে ভালো হতো।
এর আগে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়াটর দিকে কক্সবাজারে পৌঁছে ট্রফি। সীমান্ত সম্মেলেনকেন্দ্র ঊর্মিতে রাখা হয় ট্রফিটি।
বিসিবির সিনিয়র ম্যানেজার মিডিয়া এ্যান্ড কমিউনিকেশন রাবীন ইমাম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এর তত্ত্বাবধানে আগামী ফেব্রুয়ারী-মার্চ ২০২৫-এ পাকিস্তানে আইসিসি ম্যানস চ্যাম্পিয়নশীপ শুরু হতে যাচ্ছে। মূল ট্রফিটি উক্ত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দেশ সমূহে প্রদর্শনের অংশ হিসেবে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে।
এদিকে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও এখনো কাটেনি আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা। নির্ধারিত আয়োজক দেশ পাকিস্তানে ভারতের খেলতে যেতে না চাওয়া থেকেই মূলত সব সমস্যার শুরু। এখন পর্যন্ত কাটেনি এই জটিলতা।
দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে অচলাবস্থা কবে কাটবে, তা–ও নিশ্চিত নয়। তবে এসবের মধ্যেও থেমে নেই আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বিশ্বভ্রমণ।
জানা গেছে, ঢাকায় অবস্থানরত উৎসাহীরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দেখতে পাবেন ১২ ডিসেম্বর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে। সেদিন জনসাধারণের দর্শনের জন্য ট্রফি রাখা হবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। পরদিন, অর্থাৎ ১৩ ডিসেম্বর ট্রফি যাবে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ট্রফি সেখানে রাখা হবে।
এই প্রদর্শনী জাতীয় পুরুষ ও নারী ক্রিকেট দল, সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, ক্রিকেট কর্মকর্তা, সংগঠক এবং সংবাদমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এপরই মূলত ট্রফিটি ঢাকা ছেড়ে যাবে। বাংলাদেশ ছাড়ার পর ট্রফিটি ১৫ থেকে ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার কথা। এরপর অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড ঘুরে আগামী ১৫ জানুয়ারি ট্রফি যাবে ভারতে।